গণতন্ত্রের শত্রু কে? মিত্রই বা কে? এই প্রশ্নগুলো এখন বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস গণতন্ত্রের এই কথার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে বাংলাদেশে। তবে এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচন বা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্বের নামই গণতন্ত্র নয়। আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা, জাতীয় প্রশ্নে ঐকমত্য ইত্যাদি সব মিলিয়েই গণতন্ত্র। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থানটা কী? জাতীয় প্রশ্নে এখানে কোনো ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। আইনের শাসনের কথা দুটো বড়ো দল বললেও, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আইনের শাসনের বিষয়টিকে দেখা হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাংলাদেশের সংবিধানের একটি অংশ হলেও, এই স্বাধীনতা এখনো নিশ্চিত হয়নি। বিচার বিভাগ সম্পর্কে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মন্তব্য, উচ্চ আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে লাঠি-মিছিল এ দেশে গণতন্ত্রের বিকাশকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে। একই সাথে একুশ শতকে গণতন্ত্রের স্বরূপ ও বাংলাদেশের করণীয় বিষয়গুলোর ওপরও দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। বাহ্যত প্রবন্ধগুলো ঢাকার দুটো জনপ্রিয় দৈনিক ইত্তেফাক ও যুগান্তরে পর্যায়ক্রমে ছাপা হয়েছিল। ভবিষ্যৎ এ গণতন্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে এই মূল্যায়নগুলো আমাদের কাজে লাগবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান এর বই সমূহ আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির চমৎকার বিশ্লেষণী পাঠ। ‘বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর’ তার সবচেয়ে জনপ্রিয় বই। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতি, বিশ্ব রাজনীতিতে পরাশক্তিগুলোর স্বার্থ ও দ্বন্দ্ব, ভূ-রাজনীতির অতীত ও বর্তমান- এসব বিষয়ে তার বিশ্লেষণাত্মক লেখার তুলনা নেই। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক এ সদস্য গত দুই দশকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতি, কূটনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব গবেষণা করেছেন। এসব গবেষণার ভিত্তিতে এ সকল বিষয়ে চমৎকার তথ্যবহুল কিছু বইও রচনা করেছেন তিনি। এছাড়াও তুলনামূলক রাজনীতি নিয়েও দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন, লিখেছেন বইও। তার লেখালেখি কেবল বইয়ের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা আর অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তিনি নিয়মিতই গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে জাতীয় দৈনিকগুলোতে কলাম লেখেন। গবেষণার কাজে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে বেড়ানো তারেক শামসুর রেহমানের অভিজ্ঞতার ঝুলিও তাই সমৃদ্ধ, রয়েছে আন্তর্জাতিক নামডাকও। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আইভিপি ফেলো। ড. তারেক শামসুর রেহমান এর বই সমগ্র একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য মৌলিক পাঠ, অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতি ও কূটকৌশল সম্পর্কে জানতে আগ্রহীদের জন্যও উপযোগী। ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি কোষ’, ‘মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা ভাবনা’, ‘নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি’, ‘দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের পূর্বমুখী রাজনীতি’, ‘রাজনীতি ২০০৯’, ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন’, ইত্যাদি তার পাঠকপ্রিয় বইগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য।