ফ্ল্যাপে লিখা কথা মানবগোষ্ঠীর সামাজিক প্রত্নতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক, জাতিতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় উপাসনায়, দৈনন্দিন কাজকর্মে বা স্বীয়জীবনের সার্বিক প্রয়োজনের তাগিদে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্য সামগ্রীতে শিল্পরস এবং নান্দনিকতায় সম্পৃক্ত থেকে শত-সহস্র বছরের ব্যবধানে বাংলার সকল অঞ্চলে বংশ-পরম্পরায় চলমান এই লোকশিল্প। মানুষের জন্য লোকশিল্প আবার লোকশিল্পের জন্য মানুষ। লোকশিল্পের সংজ্ঞা লুক্বায়িত রয়েছে।
মানবসভ্যতার বহুবিধ স্তরে ক্রম-বিকাশের সাথে শিল্পকর্ম সৃষ্টির তারতম্য ঘটে থাকলেও এটি মূল ধারা থেকে কখনো বিচ্যুত হয়নি। সুন্দর দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম মানুষ দীর্ঘকালধরে ব্যবহার করে থাকে, যা সবার ভালো লাগে, যা দৃষ্টিনন্দন, যা মনে-প্রাণে এক অপরূপ ও আনন্দ সৃষ্টি করে- যা সুষমামণ্ডিত সেটিই যথার্থ উৎকর্ষ শিল্পসামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে জন্ম দিয়েছে এই লোকশিল্প। লোকশিল্প মানুষের জাতিভেদ শ্রেণীবিন্যাসকে ভুলিয়ে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার স্থান দখল করে লোকজীবন ও লোকশিল্পের সম্পর্ক এক ও অবিচ্ছেদ্য বলে গণ্য করেছে।
বাংলার লোকশিল্প গ্রন্থে বিদ্যায়তনিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। গ্রন্থটির বিভিন্ন অধ্যায়ে বর্ণিত শিরোনামা সংক্ষিপ্ত সময়ে পাঠ ও পঠনে বিষয়টির ওপর ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। অত্র গ্রন্থটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রী, পাঠক গবেষকদের লোকশিল্প সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেবে।
ঠাকুরগাঁও-এর মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারের সন্তান মােহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। সরকারী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি জাদুঘর, ফোকলোর, নৃতত্ব ও জাতিতত্ব বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণায় সংশ্লিষ্ট থেকে বহুসংখ্যক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচিত অধিকাংশ গ্রন্থই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে নির্বাচিত। কাব্যগ্রন্থ হিসেবে এটিই তার প্রথম প্রয়াস। তিনি দেশবিদেশের বিভিন্ন জাদুঘর ও প্রত্নস্থল পরিদর্শন ছাড়াও বহু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি দুই সন্তানের জনক।