ভূমিকা নদীমাতৃক বাংলার সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা গ্রাম, নদ-নদী ও নিসর্গের বৈচিত্রময় দৃশ্য রং তুলি ও কলম দিয়ে জীবন্ত ছবি এঁকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করান ময়মনসিংহের পলল ভূমির সন্তান শিল্পকলার দিকপাল জয়নুল আবেদিন। যিনি সর্বদা মা মাটি ও মানুষের কাছাকাছি থেকে তাদের নেশা-পেশা, জীবন যাত্রা ও কষ্ট-বেদনাকে পরতে পরতে অনুভব করে, ভাবনাগুলোকে চিত্রের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে পরিচিত করতে সক্ষম হন। যিনি তাঁর একক প্রচেষ্টায় কুসংস্কারমুক্ত, ধর্মান্ধ সমাজ ব্যবস্থার মাঝে শিল্প ও শিল্পী সৃষ্টির আন্দোলনে পথ প্রদর্শক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় চারুকলা ইনস্টিটিউট, সোনরগাঁয়ে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং ময়মনসিংহে সংগ্রশালা প্রতিষ্ঠা করে এই বাঙালার চারু ও কারুকলার ঐতিহ্য ও কারুশিল্পকে লালনের দ্বার উন্মেচন করেছেন। জয়নুল আবেদিনের দ্বার উন্মেচন করেছেন। জয়নুল আবেদিনের স্বীয় কর্মপ্রচেষ্টা ও যোগ্য নেতৃত্বে দেশের লোক-ঐতিহ্য, লোক-সংস্কৃতি ও লোক-কৃতিকে ধ্বংসের হাত হতে রক্ষার জন্য অনেক উত্তরসূরী রেখে গেছেন। একান্ত অমায়িক ব্যবহার এবং লাজুক প্রকৃতির স্বভাব ও আন্তরিকতার জন্য তাঁকে এদেশের শিল্পী সমাজ, পণ্ডিতমহল ও অগণিত ভক্তরা তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শিল্পাচার্য উপাধিতে ভূষিত করেন। ঢাকায় শিশুদের জন্য প্রথম আর্ট স্কুল স্থাপনের মধ্য দিয়ে কচি-কাঁচাদের শিল্পীমন সৃষ্টির জন্য অনন্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি শিশুদের অত্যন্ত ভালবাসতেন বলে তাঁর জীবনের শেষ বাংলা নববর্ষবরণ অনুষ্ঠান শান্তিনগরের খোলামেলা গাছ-গাছালির ছায়াঘেরা পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। আজ শিল্পাচার্যের আদর্শ অনুকরণে বাংলাদেশে অনেক আর্ট কলেজ এবং শিশুদের জন্য আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এটি তাঁরই অনুপ্রেরণা। মেধা, মনন, প্রজ্ঞা ও মানবিক বিষয়গুলোতে অতুলনীয় ও ব্যতিক্রমধর্মী অবদানের জন্য জয়নুল আবেদিন খ্যাতিমান পুরুষ, যার তুলনা হয়না। এমন একজন ব্যক্তির চরিতাবিধান রচনা করা আমার পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব ছিলনা। তবুও এক্ষেত্রে সামান্য প্রচেষ্টা চালিয়েছি মাত্র। আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় সাহস যুগিয়েছেন শিল্প সমালোচক ও জয়নুলি জীবনী লেখক শিল্পী অধ্যাপক এমদাদুল হক মোঃ মতলুব আলী, যাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। গ্রন্থটিতে সংক্ষিপ্ত জীবনী অংশে সামান্য তথ্য উপস্থাপনা করেছি। ভুল ক্রটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। সংশোধনের জন্য পাঠক সমাজকে এগিয়ে আসার জন্য জানাই আগাম শুভেচ্ছা। জয়নুল আবেদিন সম্পর্কে সামান্য রচনার জন্য শ্রদ্ধেয় শিল্পী ও অধ্যাপক মাহমুদুল হক, বন্ধুবর মির্জা এন হক, শিল্পী তরুণ ঘোষ, শিল্পী হাবিবুর রহমান, শিল্পী আনজালুর রহমান, শিল্পী শা আ বিকাশ এবং ছড়াকার আলম তালুকদার নানাভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। এছাড়া প্রত্যক্ষ তাগিদ প্রদান করেছেন আত্মজা সেতারা সিরাজ, পুত্র সৈতক ও সমুদ্র, মোনসুর উদ্দিন আহমদ, রুহুল আজাদ এদের সকলকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। জয়নুল আবেদিনের অংকিত শিল্পকর্মের আলোকচিত্র ব্যবহারের জন্যে বেগম জাহানারা আবেদিন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ, জনাব আবুল খায়ের, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি সবিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। হাতেখড়ি প্রকাশনার কর্ণধার জনাব আবু তাহের গ্রন্থটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে আমাকে ঋণী করেছেন। প্রন্থটি পাঠক সমাজে অদৃত হলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে হলে মনে করি।
ঠাকুরগাঁও-এর মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারের সন্তান মােহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। সরকারী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি জাদুঘর, ফোকলোর, নৃতত্ব ও জাতিতত্ব বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণায় সংশ্লিষ্ট থেকে বহুসংখ্যক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচিত অধিকাংশ গ্রন্থই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে নির্বাচিত। কাব্যগ্রন্থ হিসেবে এটিই তার প্রথম প্রয়াস। তিনি দেশবিদেশের বিভিন্ন জাদুঘর ও প্রত্নস্থল পরিদর্শন ছাড়াও বহু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি দুই সন্তানের জনক।