আমাদের প্রিয় রব্বে কারিম রমাদানের সিয়াম আমাদের ওপর ফরজ করেছেন এবং তিনিই আমাদের জন্য এর প্রতিদান দেবেন; কিন্তু রমাদানের সিয়াম-পালনের পূর্বে আমাদের জন্য জরুরি হলো, সিয়াম-বিষয়ক প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়িল ভালোভাবে জানা, বোঝা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। এটি সকল মুমিনেরই কর্তব্য। কেননা, বিশুদ্ধ নিয়াত ও পদ্ধতিতে সিয়াম-পালন করলেই কেবল আল্লাহ তাআলার কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। বক্ষ্যমাণ এ গ্রন্থটিতে শাইখ আহমাদ মুসা জিবরীল হাফিজাহুল্লাহ অনেক সুন্দরভাবে রমাদানের বিভিন্ন মাসআলা আলোচনা করেছেন। তিনি হাম্বলী মাযহাবের কিতাবকে সামনে রেখে আলোচনা করলেও মাসআলাগুলো আলোচনা করার ক্ষেত্রে একটি মাযহাবের ওপর সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং তুলনামূলক ফিকহি মাসআলাগুলোও আলোচনা করেছেন। ইমামদের মতামতগুলো তুলে ধরেছেন। এ ক্ষেত্রে হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের ইমামদের মতামতগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন। এরপর কেন ও কীভাবে এই মতগুলো এলো, কোনটি সঠিক হতে পারে ইত্যাদি দেখিয়েছেন। উসুলুল ফিকহ ও তুলনামূলক ফিকহের আলোকে মাসাআলাগুলো তিনি আলোচনা করেছেন। আর এগুলো আলোচনা করতে গিয়ে কখনো জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, কখনো হাম্বলী মাযহাবের মুতামাদ মতকে তার নিজ ইজতিহাদি যোগ্যতার আলোকে ভুল বা দুর্বল বলেছেন, আবার কখনো শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহর মতকে দুর্বল বলেছেন, আবার কখনো প্রাধান্য দিয়েছেন। শাইখের এমন বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার কারণে, বইটির বিশেষত্ব হলো—এর মাধ্যমে পাঠক এখান থেকে মাসআলা শেখার পাশাপাশি জানতে পারবেন মাসআলাটা কীভাবে এবং কী পদ্ধতিতে এলো। সেই সাথে জানতে পারবেন মুজতাহিদ ইমাম বা উলামায়ের কেরামের মতভিন্নতার দালিলিক ও যৌক্তিক কারণ—যা একজন পাঠককে ভিন্নমতের প্রতি উদার ও সহনশীল হতে সহায়তা করবে।
শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। বাবা শাইখ মুসা জিবরিল মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন বলে আহমাদ মুসা জিবরিল শৈশবের বেশ কিছু সময় মদীনায় কাটান। সেখানেই এগারাে বছর বয়সে তিনি কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন। বুখারি ও মুসলিম মুখস্থ করেন হাইস্কুল পাশ করার আগেই। শাইখ আহমাদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৯৮৯ সালে হাইস্কুল পাশ করেন এবং কৈশােরের বাকি সময়টুকু সেখানেই কাটান। পরবর্তীকালে তিনি বুখারি ও মুসলিম-এর সনদ মুখস্থ করেন৷ এরপর কুতুবুস সিত্তাহর বাকি চারটি গ্রন্থও মুখস্থ করেন। শাইখ আহমাদও তাঁর বাবার মতাে মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহর ওপর ডিগ্রি নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি ও আইনের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। শাইখ আহমাদমুসা জিবরিল বহু আলিমের কাছ থেকে ইলম অধ্যয়ন করেন। আঠারাে বছর বয়স হবার আগেই তিনি তাঁর বাবার কাছে ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা -এর পুরাে মাজমুয়ুল ফাতাওয়া (৩৭ খণ্ডে সমাপ্ত), ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম -এর কিতাব ও ইমাম ইবনু হাযম -এর আল মুহাল্লা (১১ খণ্ডে সমাপ্ত) পড়ে ফেলেন। আহমাদ মুসা জিবরিল শাইখ ইবনু উসাইমিন -এর তত্ত্বাবধানে অনেকগুলাে কিতাবের অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন, তিনি তাঁর কাছ থেকে অত্যন্ত বিরল তাযকিয়াহও লাভ করেন। শাইখ বাকর আবু যায়িদ -এর সাথে একান্ত দারসে তিনি আল ইমাম। ওয়াল মুজাদ্দিদ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আবৃদিল ওয়াহহাব , ও শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা -এর কিছু কিতাবও অধ্যয়ন করেন। শাইখ মুহাম্মাদ মুখতার আশ-শানকিতি -এর অধীনে চার বছর পড়াশােনা করেন তিনি। শাইখ আহমাদ আল্লামা হামুদ বিন উকলা আশ-শুয়াইবি -এর অধীনেও অধ্যয়ন করেন, তাঁর কাছ থেকে তাযকিয়াহও লাভ করেন। তিনি তাঁর বাবার সহপাঠী শাইখ ইহসান ইলাহি জহির -এর অধীনেও পড়াশােনা করেছেন। শাইখ ইহসান আমেরিকায় কিশাের শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের সাথে পরিচিত হবার পর চমৎকৃত হয়ে তাঁর বাবাকে বলেন, ইন শা আল্লাহ আপনি একজন মুজাদ্দিদ গড়ে তুলেছেন। তিনি আরাে বলেন, এই ছেলেটি তাে আমার বইগুলাে সম্পর্কে আমার চেয়েও বেশি জানে। ‘আর রাহিকুল মাখতুম’-এর লেখক শাইখ সফিয়ুর রাহমান মুবারাকপুরি -এর অধীনে শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল দীর্ঘ পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও তিনি অধ্যয়ন করেন শাইখ মুকবিল, শাইখ আব্দুল্লাহ গুনাঈমান, শাইখ মুহাম্মাদ আইয়ুব এবং শাইখ আতিয়াহ আসসালিম (রাহিমাহুমুল্লাহ)-এর অধীনে। শাইখ আতিয়াহ আসসালিম ছিলেন শাইখ আল্লামাহ মুহাম্মাদ আল আমিন শানকিতি -এর প্রধান ছাত্র, শাইখ আশ-শানকিতি -এর ইন্তিকালের পর তাঁর প্রধান তাফসিরগ্রন্থ ‘আদওয়ায়ুল বায়ান’-এর কাজ তিনিই শেষ করেন। আহমাদ মুসা জিবরিল শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায -এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর শাইখ ইবরাহিম আলহুসাইন -এরও ছাত্র ছিলেন। “আললাজনাহ আদদাইমাহ লিল বুহুসিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতাহ —Permanent Committee for Islamic Research and Issuing Fatwas—এর প্রথম দিকের সদস্য শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাওদ -এর সাথে শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল হাজ্জ করার সুযােগ লাভ করেন। এছাড়া দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষাণাবেক্ষণ কমিটির প্রধান শাইখ সালিহ আল হুসাইনের অধীনেও তিনি অধ্যয়নের সুযােগ পান। আহমাদ মুসা জিবরিল মুহাদ্দিস শাইখ হামাদ আল আনসারি ও-এর অধীনে হাদীস অধ্যয়ন করেন এবং তাঁর কাছ থেকেও তাযকিয়াহ লাভ করেন। তিনি শাইখ আবু মালিক মুহাম্মাদ শাকরাহ -এর অধীনেও অধ্যয়ন করেন। শাইখ আবু মালিক ছিলেন শাইখ আলবানি -এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শাইখ আল-আলবানি ওয়াসিয়াহতে শাইখ আবু মালিককে তার জানাযার ইমামতি করার জন্য অনুরােধ করেন। শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল রবি আল মাদখালির জামাতা শাইখ মুসা আলকারনিরও ছাত্র৷ কুরআনের ব্যাপারে তিনি শাইখ মুহাম্মাদ মাবাদ ও অন্যান্যদের কাছ থেকে ইজাযাহপ্রাপ্ত হন। শাইখ মুসা জিবরিল ও শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের ইলম থেকে উপকৃত হবার জন্য শাইখ বিন বায ও আমেরিকায় থাকা সওদি ছাত্রদের উৎসাহিত করেন। শাইখ বিন বায -এর মৃত্যুর তিন মাস আগে শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল তাঁর কাছ থেকেও তাযকিয়াহ লাভ করেন। শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের ব্যাপারে মন্তব্য করার সময়ে শাইখ বিন বায ও তাঁকে ‘শাইখ’ হিসেবে সম্বােধন করে বলেন, তিনি তাঁর সুপরিচিত এবং উত্তম আকিদাহ পােষণ করেন। | শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল বর্তমানে আমেরিকায় বসবাসরত আছেন।