একজন অবলা নারী যখন প্রেমিকা এবং কারো বউয়ের ভূমিকা নিয়ে মর্তে বেঁচে থাকে; তখন তাঁর জীবনের গতিপথ অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। এই অস্বাভাবিক সুখ তাঁর দুঃখের সাথী কখনো হয় না। সে দিন-রাত অবিরাম বয়ে চলে খরস্রোতা নদীর মতো। যেন কোনো অবসর নেই, কোনো সাধনা নেই। এই অন্তিম মৃত্যু-মুহূর্তে সে তাঁর অভিনয় জগতের সব মুদ্রা অর্জন করে ফেলে। মানুষের ভাবনার বিষয়ে তার মনোযোগ থাকে না, মানুষের সুখের জন্য তাঁর কর্ম থাকে না, মানুষের দুঃখের জন্য তাঁর সহমর্মিতার প্রকাশ থাকে না। অবলা নারীদের জন্য দুটি ভূমিকায় অভিনয় করা বেশ কঠিন ও জটিল কর্ম। যে হাঁটতে শেখেনি, তাঁর জন্য দৌঁড়ানো মোটেও সহজ দায়িত্ব নয়। আর যদিও কিছু কর্ম সহজে শেষ করতে পারে, তখন তার মনোযোগ নিবদ্ধ হয়ে পড়ে অচেনা-অজানা মোহের প্রতি। এই অজানা পথের কাঁটা তাঁর পায়ে বিঁধে সকাল-সন্ধ্যা। যার কারণে- তার সমস্ত জীবন কাটে কাঁটার আঘাতে-যন্ত্রণায়, যন্ত্রণায়। সে নারী হতে চেয়েও নারী হতে পারে না, সে মডার্ণ বেশভূষা ধারণ করেও সত্যিকারের আধুনিক মানবী হতে পারে না। পুরুষের অন্যায় সিদ্ধান্ত সে মেনে নিতে পারে এক নিমিষেই। এই পৌরুষের আধিপত্য তাকে সবসময় পীড়া দেয়, যন্ত্রণা দেয়; সে মুখ ফুটে বলতে পারে না, সে প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ, অবলা নারীরা কখনোই স্বাধীন মস্তিস্ক নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। ‘পুড়ে যাচ্ছে পৌরাণিক বিহঙ্গ’র কবিতাগুলো একজন অবেলা নারীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে লেখা হয়েছে। ঐ মিথ্যা ও সত্য মিশ্রিত জীবন, তাঁর নিকটতম প্রতিবেশী হয়ে আশেপাশে জড়িয়ে আছে, আর সেই বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে এই কবিতাগুলো ক্ষুদ্র আহ্বানপত্র। এখানে প্রতিটি কবিতা তার জন্য মুক্তির দূত হিসেবে কাজ করতে নিয়োজিত। এই মুক্তির দূতকে হয়তো গ্রহণ করার সামর্থ তাঁর নেই। কারণ, সে এখনো অবলা থেকে নারী হয়ে ওঠার পথে পৌঁছাতে পারেনি। ঈশ্বর জানে- তাঁর আত্মিক মুক্তির অপেক্ষা আমি কতটা কামনা করি। যখন মানুষ মুমূর্ষু-শয্যাশায়ী হয়ে বিছানা কেন্দ্রীক যাপিত জীবন যাপন করে, তখন মৃত্যু মুহূর্তে মুহূর্তে কড়া নাড়তে থাকে নিজের ভিতর। সে কড়া নাড়ার শব্দ কেউ বোঝে না। সবাই কেবল অবলোকন করে নির্মম বাস্তবতা। প্রেমিকের সমস্ত আওভান প্রেমিকার নিকট পড়ে আছে মৃত্যুর সেই কঠিন বাস্তবতা হয়ে। যে প্রাণ প্রেমিকা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না। আর এটিই তো প্রকৃতির নিয়ম। সে নিয়ম মুছে প্রেমিক কী করে নতুন নিয়ম গড়ে! এমন অকথিত প্রেমে প্রেমিক চায় তার প্রেমিকার নিকট তার প্রেম নৈঃশব্দ্য হয়ে বাজুক পরাণের গহীন ভিতর। যেখানে বন্দিদশা নেই, যেখানে প্রেমিকার কোনো দ্বিতীয় অংশ নেই, যেখানে প্রেমিকা কেবল এক ও অদ্বিতীয়। সেই অদ্বিতীয় অংশেই আমার বসবাস। খুঁজে নিও। উপরের কথাগুলো কেবল একজন বন্দি প্রেমিকার প্রতি তার প্রেমিকের আওভান। খুব বেশি জীবন ঘনিষ্ঠ আঙ্গিকে বিভিন্নভাবে কবিতাগুলো প্রেমিকাকে নিবেদন করা হয়েছে। হয়তো প্রেমিকার নিকট এই কবিতার আওভানের দুই পয়সার দাম নেই। তবে একজন প্রেমিকের নিকট এই আওভানের দাম অমূল্য! এই অমূল্য আওভানের কথাগুলো হয়তো এ দেশের কোনো প্রেমিক-প্রেমিকার মনে দাগ কেটে যাবে, সে আশায় রইলাম। তাজুল ইসলাম কবি
তাজুল ইসলাম ২০ অক্টোবর ১৯৯৯ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার অন্তর্ভুক্ত যতীন্দ্র নারায়ন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চরশিবের কুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমনিরহাট থেকে প্রাথমিক শিক্ষা, চরকুলাঘট উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট থেকে মানবিক শাখায় মাধ্যমিক এবং কারমাইকেল কলেজ, রংপুর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে অধ্যয়নরত। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘শ্রেষ্ঠের সন্ধানে সুন্দরের পূজারী’ (২০১৫), ‘জারজ সন্তান’ (২০১৯) ও ‘দেহ পুড়ে অন্তর জ্বলে’ (২০২০)। প্রকাশিতব্য বইসমূহ: ‘নরকে জান্নাত’ (উপন্যাস), ‘ধর্ম বেঁচে ইমান কিনি’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘ইসলাম এবং সন্ত্রাসবাদ’ (অনুবাদ), ‘সোশ্যাল রিসার্চ’ (একাডেমিক)। লেখাচিত্র প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হলো প্রথম ই-বুক ‘পুড়ে যাচ্ছে পৌরাণিক বিহঙ্গ’। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিয়োজিত। তিনি একজন নারী অধিকার উন্নয়ন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। ২০১৫ সালে গড়ে তুলেছেন সামাজিক কল্যাণমূলক সংগঠন ‘লালকুড়ি’। দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লেখালেখি করেন।