অ,আ,ক,খ... বর্ণগুলো কেবল 'কার','ফলা'য় হয়ত শব্দমালা সৃষ্টি করে; তবে এতে প্রাণ সঞ্চরিত হয় না, যদি শব্দের বুননে অনুভূতি স্পর্শ না করে,যদি ভাবের পরশ না লাগে। আমার গ্রাম্য শৈশব থেকে শহুরে জীবনের না পরিক্রমায় উৎসারিত জীবনানুভূতি ও ভাবগুলো অক্ষরে অক্ষরে,শব্দের বুননে সাকার হয়েছে এই কাব্যগ্রন্থে। কখনো মনে হবে, এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকৃতির সাথে এক জৈব সত্তা, সমাজ সমুদ্রের সাথে ভাসমান এক ক্ষুদ্র মানব সত্তার সম্পর্কের রসায়নে শব্দমাল্যে পুঞ্জীভূত ভাব ও অনুভবের শিশিরবিন্দুর মত জমা ঐশ্বর্য। কখনো মনে হবে, ভাবগুলো শব্দমাল্যকে হিমায়িত করেছে তুহিনশুভ্রতায়। কেবল দৃষ্টির ত্রিমাত্রিক ভঙ্গিমায় একটু চেখে দেখতে হবে, একটু নেড়েচেড়ে দেখতে হবে,গভীরে যেতে হবে... কখনো কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে। আমিত্ব ও আমিত্বের সাথে সকলের সহাবস্থানে কখনো বৈপরিত্ব,কখনো বিরুদ্ধতা, কখনো অন্যোন্যের এক মিশেল পরিক্রমার নির্যাস এই কাব্যগ্রন্থ। প্রকৃতির ক্যানভাসে মানব ও মানব মনের সংকটের ছবিটাই প্রতিভাসিত হয়েছে। হয়ত আমার আমিত্বে কেউকেউ নিজেদের খুঁজে পাবে, কারো হয়ত আমার বাড়ির আঙিনাকে অতিপরিচিত মনে হবে। এই মনে হওয়ার অপার স্বাধীনতায় আমার আমিত্বের শৃঙ্খল ভেঙে যাবে। এই ভাঙ্গার গানের অনুকম্পায় সব সংস্কার আন্দোলিত হবে।
জাকারিয়া আহমেদ ৫ জুলাই ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত বুধল ইউনিয়নের বুধল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- আব্দুল বাছির। মাতা- আনুফা বেগম। তিনি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পাশ করেন যথাক্রমে বুধল উচ্চ বিদ্যালয় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজ থেকে। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি তাঁর লেখক সত্তাকে জীবিকা অর্জনের পেশাগত পরিচয় থেকে স্বাধীনতা দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। কবিত্বকে তিনি নাটাই ছেঁড়া ঘুড়ির মত মনে করেন। গ্রামের অপরূপ প্রকৃতি ও মানুষের সামাজিক সম্পর্কের অম্ল-মধুর রসায়ন তাঁকে কাব্য চর্চায় প্রেরণা দিয়েছে। কৈশোরকালে কাব্য চর্চার সূচনা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে তাঁর পূর্ণ বিকাশ ঘটে। 'দাঁড়কাক' তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।