শিরীন পা বাড়ালো, হেঁটে হেঁটে বাগান পর্যন্ত আসলো। নিম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বয়সের ভারে বিপর্যস্ত বাড়িটার দিকে তাকালো। ও ওর বাবাকে কতবার বলেছে এই বাড়ি ভেঙে নতুন করে করতে। কিন্তু অহীদুল হক কথা শুনেননি। বাড়িতে সাজ-সজ্জার বালাই নেই। নিচে কতগুলো রুম, উপরে কতগুলো সারিবদ্ধ রুম। দূর থেকে দেখলে যে কেউই এটাকে স্কুল ভবন ভেবে ভুল করবে। 'আগে বাবা একাই উপার্জন করতেন এবং বড়ো ভাই হিসেবে একা সংসারও চালাতেন। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। আমার দুই চাচা এখন আমার বাবার চেয়েও ভালো ইনকাম করেন। বড়ো চাচা রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান করেছেন, সাথে শেয়ার ব্যাবসা। আর ছোটো চাচা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিনিয়র কর্মকর্তা। তারা চাইলেই বাড়ি নতুন করে করতে পারেন। তারা অবশ্য নতুন করে বাড়ি বানানোর পক্ষেই। কিন্তু বাবা কেন চাচ্ছেন না নতুন করে বাড়ি করতে? হয়তো মায়া। ভালোবাসার মায়া, নিজের স্ত্রীর জন্য। মা বাড়িটাকে খুব যত্নে সাজিয়েছিলেন। কিছু মানুষ তার কাছের মানুষকে হারিয়ে বেঁচে থাকতে পারে না। বেঁচে থাকলেও তারা হয়তো হারিয়ে যাওয়া মানুষের ভালো-মন্দকে সাথে নিয়েই বাঁচে। কাছের মানুষের স্মৃতিটুকুই তাদের টেনেটুনে বাঁচিয়ে রাখে।' ভাবতে ভাবতে কখন জানি শিরীনের চোখের কোণে সামান্য পানি চলে এসেছিলো। ও দ্রুত চোখ মুছে বাড়ির দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলো যে ওকে কেউ দেখছে কিনা! না, কেউ নেই। শিরীন পা বাড়ালো।
পৃথিবীতে শতকোটি মানুষ। সবাই ভিন্ন চিন্তা বহন করে, সবার গল্প ভিন্ন। মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, পাওয়া-না পাওয়া সকলের অনুভূতিই কিন্তু আলাদা। সবার মনের অনুভূতি তুলে ধরা হয়তো সম্ভব না। কিন্তু একজন মানুষকে উপস্থাপন করার সবচেয়ে বড়ো মাধ্যম হচ্ছে লেখালেখি। লেখক সাধারণ মানুষের জীবনের নানা রঙ সহজ সাবলীল ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করেন তার লেখায়। ছায়ামেঘ (বইমেলা ২০২২) এর পর মৌনতার শব্দ লেখকের প্রকাশিত দ্বিতীয় উপন্যাস।