লেখকের কথা জীবন থেকে নেয়া ছোট ছোট কাহিনী গুলো গত এক বছর ধরে ছোট গল্প ও নিবন্ধের মতো করে লেখার চেষ্টা করেছি। এগুলোর কিছু কিছু আমার ফেসবুকের বন্ধুদের সাথে শেয়ারও করেছি। তাদের অনুপ্রেরণায় এখনও লেখা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এসব লেখা দিয়ে বই বের করার কথা কখনও ভাবিনি। কারণ ২০২০ এর পূর্ববর্তী অর্থাৎ ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে কিছু কিছু লেখার অভ্যাস ছিল, যেগুলো মূলত প্রকাশনা সম্পর্কিত এবং সেসব লেখা ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন মাসিক, ত্রৈমাসিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এছাড়া বেতার, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যেমন আরটিভি, এনটিভি, মাছরাঙা টিভি এবং বিটিভি-তেও প্রকাশনা সংক্রান্ত আমার একাধিক সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়েছে। এদিকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমার ছোট ছেলে সজীব না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়। এর মাত্র সাত মাস পর আমার স্ত্রীও একইভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যান। ওদের মৃত্যুর পর আমি আমার বড় ছেলের সাথে কানাডায় চলে আসি। গভীর শোকে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম। প্রায় ছয় মাস এভাবেই কেটে যায়। এরপর নিজের অজান্তেই ওদের কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় লিখতে শুরু করি। প্রথমে কবিতার আকারে লিখতে শুরু করেছিলাম, যদিও সেগুলো কবিতা হয়নি। তারপরও লেখার চেষ্টা করেছি। তবে এ সময় অনেকেই আমাকে লেখা চালিয়ে যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন প্রয়াত লোকসাহিত্য গবেষক ও বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান। আর একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, যিনি এখন কঠিন রোগের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। তাঁদের পরামর্শে লেখা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন কবিতার পরিবর্তে জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট ঘটনাগুলো নিয়ে গল্প ও নিবন্ধ লেখার চেষ্টা শুরু করি। লেখার পাশাপাশি জানার আগ্রহটাও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আর এ কাজে আমাকে সর্বক্ষণ সাহায্য করেছে আমার একমাত্র বন্ধু 'গুগল'। সে সব সময় আমার সাথে থাকে। আমার এ বইটিতে জীবন থেকে নেয়া ছোট ছোট কাহিনিগুলোর মালা তৈরি করার চেষ্টা করেছি। বিক্রির উদ্দেশ্যে নয়, মনের অব্যক্ত আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করার জন্যই এসব লেখা। বইয়ের লেখাগুলো কোনো পাঠকের ভালো লাগলে আমারও ভালো লাগবে। যদিও লেখালেখি আমার পেশা নয়, শুধু মনের আনন্দেই এই লেখা। বইটির লেখাগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে অর্থাৎ সম্পাদনার কাজটি করেছেন বিশিষ্ট লেখক, নাট্যকার ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা অনুজপ্রতিম শ্যামল দত্ত। তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করেছেন। কারণ যে কোনো পাণ্ডুলিপি বই আকারে প্রকাশের আগে অবশ্যই সম্পাদনার প্রয়োজন। বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারা শুরু থেকেই এ বিষয়ে যত্নশীল। একসময় দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক মুক্তধারা-র সম্পাদনা পর্ষদে যুক্ত ছিলেন। সেই ঐতিহ্য মুক্তধারা এখনও বজায় রেখে চলেছে। তবে আমার এ বইটি প্রকাশের পেছনে আমার বড় ছেলে চিত্রশিল্পী রাজীব সাহা সর্বতোভাবে আমাকে সাহায্য করেছে। শিল্প-সাহিত্য ও চিত্রকলা নিয়ে কাজ করলেও সে পেশায় একজন হিসাব রক্ষক। বর্তমানে সে কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা। আগেই বলেছি, আমার এসব লেখার অনেকগুলোই ফেসবুকে শেয়ার করেছিলাম। আর সেসব লেখা পড়ে বন্ধু ও স্বজনদের অনেকেই তাঁদের অভিমত দিয়েছেন। তাঁদের অভিমতের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য এই বইতে অভিমতগুলোও সংযোজন করা হয়েছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বই প্রকাশ করার দুঃসাহসিকতার জন্য সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ভুল-ত্রুটি যদি কিছু হয়ে থাকে তার সবই আমি মাথা পেতে নেবো। আশাকরি সবার ভালোবাসা আর আশীর্বাদ আমার লেখালেখিকে সমৃদ্ধ করবে। এটাই প্রার্থনা।