১৯৪৭-এর দেশভাগ এই উপমহাদেশের সবচেয়ে মর্মন্তুদ রাজনৈতিক ঘটনা। এর ফলে কয়েক লক্ষ পরিবার গৃহচ্যুত হয়, মৃত্যুবরণ করে অসংখ্য মানুষ। তাদের মেনে নিতে হয় উদ্বাস্তুজীবন। দুর্ভিক্ষ, অপমান জীবিতদের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। সেই অবর্ণনীয় জীবনের করুণ ঘটনা বহু ভাষাভাষীর এই উপমহাদেশের সাহিত্যিকদের রচনায় উঠে এসেছে। বাংলা ছোটগল্পেও রূপায়িত হয়েছে দেশভাগ ও উদ্বাস্তুজীবনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো। এ কথা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই যে, ওই রক্তাক্ত ঘটনা প্রজন্ম পরম্পরায় বহন করে চলেছে মনে, মনোজগতে। এবং প্রতিনিয়তই সচেতন বিবেকবান মানুষকে তা দগ্ধ করে চলেছে। ফলে কেবল '৪৭-এ সরাসরি ক্ষতির শিকার জনগোষ্ঠীই নয়, পরবর্তীকালের জনমনেও তা দগদগে হয়ে আছে। সেসব ঘটনা নানাভাবে বাংলা ছোটগল্পের সীমানা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সংকলনে আঠারোটি গল্প সংকলিত হয়েছে। একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলো নির্বাচিত। বইটির ভূমিকায় তা স্পষ্টভাবে উল্লিখিত। সম্পাদক হামিদ কায়সার কথাসাহিত্যচর্চায় নিজের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছেন। বাংলা ছোটগল্পের পূর্বাপর তাঁর ভালোভাবেই জানা । অত্যন্ত সচেতন, নৈর্ব্যক্তিক ও পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিতে তিনি যেসব গল্প বেছে নিয়েছেন সেগুলো আমাদের সাহিত্যের সম্পদ। সংকলনটি দেশভাগের সাহিত্য বিষয়ে নতুন একটি দিক উন্মোচন করবে।
হামিদ কায়সার, জন্ম ১৪ নভেম্বর, ১৯৬৬। বাবা আব্দুর রহমান মাস্টার। মা হামিদা বেগম। লেখালেখির শুরু কলেজ জীবন থেকে। পড়াশােনা শেষ করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মুলত গল্পকার। তার গল্পের বিষয়, পটভূমি ভিন্নতর ব্যঞ্জনা তৈরি করে। গল্পের পাশাপাশি উপন্যাসেও সমান স্বাচ্ছন্দ। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮) পছন্দ করেন ভ্রমণ করতে । সবসময় ভ্রমণের ভেতর খুঁজে বেড়ান লেখার রসদ। জীবন। জীবিকার প্রয়ােজনে চাকরি-বাকরি করাকে তীব্র অপছন্দ করলেও লেখালেখির বিষয়টা মাথায় ঘুণপােকার মতাে কিলবিল করে। বিবাহিত জীবনে স্ত্রী কানিজ ফাতেমা শাহীন ও পুত্র অনির্বাণ কায়সারকে নিয়ে সুখের সংসার।