ভূমিকার পরিবর্তে : জীবনজটিলতার অভিক্ষেপ ‘খবির ভিক্ষুক’ নামের গল্পটি পড়ে চমকে উঠি। ডাকাতি করে জেল খেটে ফিরে আসা খবির এখন ভিক্ষা করে। বেশ শান্তিতেই দিন কাটে। কারো সাতে নেই, পাঁচে নেই। কিন্তু সেই খবির যখন দেখে যে তার প্রতিবেশি তোবারকের উপর পাওনাদারদের জুলুম, তখন আর সে স্থির থাকতে পারে না। সে প্রতিবাদে গর্জে ওঠে, লাঠি দিয়ে মাথা ফাটায় অত্যাচারীদের। ফলে তার জেলে যেতে হয় আবার। তবু একজন প্রতিবাদী যুবক হিসেবে সকলের সম্মান পায়। প্রতিবাদের সৌন্দর্য প্রকাশে গল্পকার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ভাষার সরলতা আর গল্পের বুননে দক্ষতা প্রশংসনীয়। ‘মকবুল মিয়র দ্রোহ’ গল্পটিও নীরব প্রতিবাদের গল্প। ‘দুলালের হিসাব নিকাশ’, ‘জমিরের গল্প’, ‘রণবীর দবির’ প্রতিটি কাহিনিতেই রয়েছে প্রতিবাদের ভাষা। নিটোল প্রেমের কাহিনির ভেতরেও তিনি বুনে দেন প্রতিবাদের বীজ! শেষ বিকেলের আলোয় কাহিনিতে রয়েছে নিটোল স্মৃতিমেদুরতা। গল্পের বুনন ও বুনটে মুহম্মদ মাহমুদুর রহমান অত্যন্ত পরিশীলিত মনের পরিচয় দিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনচর্যা থেকে অভিজ্ঞতা আহরণ করেই তিনি এইসব গল্প রচনা করেছেন। জীবন-ঘনিষ্ঠতা ও সমাজ-বাস্তবতা থেকে রশদ আহরণ করেই তিনি চরিত্র নির্মাণ করেছেন। আর তা তুলে ধরেছেন গল্পের মোড়কে। বর্তমান সময়ে ছোটগল্পের যে ধারা, ভাষার যে মারপ্যাঁচ, কাহিনির যে জটিলবিন্যাস, সেই ধারা থেকে বেরিয়ে এসে তিনি সহজ সরল ভাষায় গল্প বলেছেন। একেবারে বলার ভঙ্গিতেই তিনি লিখেছেন। তাই তাঁর গল্প সাধারণ পাঠকের কাছে আদরণীয় হওয় উঠতে সক্ষম। মানবিক জীবনজটিলতার যে অভিক্ষেপ তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে তা একজন দক্ষ ভাষাশিল্পীর পক্ষেই সম্ভবপর। বাংলা কথাসাহিত্যের ভাÐার সমৃদ্ধ হবে মুহম্মদ মাহমুদুর রহমানের কলমের শক্তিতে, সেই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। ড. তপন বাগচী কবি ও ফোকলোরবিদ উপপরিচালক (গবেষণা) বাংলা একাডেমি, ঢাকা