জাপানিজরা শান্তি প্রিয়। দুনিয়া জুড়ে চলা এই সুন্দর বিজ্ঞাপনরে ফুটা করার জন্য যে কয়জন রাইটার কাজ করছেন কেনজাবারো ওয়ে তাদের মধ্যে অন্যতম। আপাত দৃষ্টিতে জাপান গণতান্ত্রিক দেশ হইলেও তাদের খুঁটি এখনো রাজ পরিবারের সাথে গাঁথা। জাপানে রাজ পরিবাররে এখনো ভগবানের মতো মানা হয়। ঠিক এই যায়গাতেই ওয়ের যত আপত্তি। ওয়ে গণতন্ত্রের বাইরে যেকোন অথরিটিরে মানতে আস্বীকার করেন। ওয়ের ডেমোক্রেটিক ভ্যালুগুলা আবার আমেরিকান ডেমোক্রেসি এবং ফ্রেন্স হিউমেনিজম দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড। যদিও ওয়ে জাপানে আমেরিকার আর্মি বেইজের সমালোচনা করেন। নোবেল লরিয়েট কেনজাবারো ওয়ে জন্ম গ্রহন করেন ১৯৩৫ সালে জাপানের শিকুকু আইল্যন্ডে। সাত ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে বাবা মারা গেলে মা এবং দাদির কাছে বেড়ে উঠেন। ওয়ের লাইফে মা আর দাদির ব্যাপক প্রভাব আছে। মা আর দাদির কোলে বসে শুনা গল্পগুলাই ছিল ওয়ের লেখক জীবনের পাথেয়। একাডেমিক বইয়ের বাইরে পড়া প্রথম বইটা ছিল নয় বছর বয়সে মায়ের দেয়া মার্ক টোয়েনের হাকালবেরি ফিন। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে জাপানিজদের আমেরিকান সাহিত্যে পড়া নিষিদ্ধ ছিল। মা বলে দিয়েছিলেন স্কুলের টিচাররা যদি বইটা দেখে ফেলে তাহলে যেন বলেন তা জার্মান রাইটারের ছদ্মনাম। দুনিয়াতে রাইটার অনেক থাকেলেও ওয়ে ছিল সেই বিরল ঘরানার যারা কলমের পাশাপাশি তাদের মুখকেও ব্যবহার করছেন সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসাবে। যার কারণে তার খাতির সবচেয়ে ভালো জমছে এডওয়ার্ড সাঈদ এবং নোয়াম চমস্কির সাথে। শত বাধাবিপত্তি আর ভয় ভীতির মধ্যেও অথরিটির করা জুলুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে ওয়ে কুণ্ঠিত হন নাই।
কেনবুরাে ওয়ের জন্ম ১৯৩৫ সালে জাপানের এক বনঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামে। যুবা বয়সে তিনি পাড়ি জমান টোকিওতে, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসী সাহিত্য নিয়ে পড়াশােনা করেন । ছােটবেলায় পরিবারে মহিলা সদস্যদের মুখে গ্রামের নানান কিংবদন্তী আর ইতিহাসের বিবরণ শুনে অভ্যস্ত হয়ে লেখালেখি শুরু করেন ১৯৫৭ সালে। কেনবুরাে ওয়ের পুত্রসন্তান হিকারির জন্য তার ব্যক্তি ও সাহিত্যিক জীবনে সঙ্কট ঘনিয়ে তােলে। এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা আর ছেলেকে মেনে নেয়ার যন্ত্রণাবিদ্ধ অভিজ্ঞতা অতুলনীয় দরদে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি আ পারসােনাল ম্যাটার (একান্ত বিষয়) উপন্যাসে। তার প্রথম উপন্যাসিকা দ্য ক্যাচ (শিকার) জাপানের সম্মানজনক সাহিত্য পুরস্কার আকুতাগাওয়া প্রাইজ লাভ করে। জাপানী ইতিহাস ও কিংবদন্তীকে সমসাময়িক ইতিহাসের আলােকে উপস্থাপনে সিদ্ধহস্ত হয়ে গণতন্ত্র ও মানবতাবাদের একনিষ্ঠ অনুরাগী কেনবুরাে ওয়ে ১৯৯৪ সালে সাহিত্যে নােবেল পুরস্কার লাভ করেন।