ইশকুলের গণ্ডি পেরুবার পরই সারওয়ার-উল-ইসলাম এর লেখালেখি শুরু। সেই বয়সে পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছে কিনা দেখার জন্য বাসা থেকে সকালবেলা পাগলের মতো ছুটতো পত্রিকা স্ট্যান্ডে। এমনও হয়েছে সকালবেলা দাঁত মাজতে মাজতে বাসা থেকে বের হয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে মিরপুর ১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে চলে গেছে। হকার কখন দোকান খুলে পত্রিকা থরে থরে সাজিয়ে রাখবে, তারপর কেনার উদ্দেশ্যে পত্রিকার শিশুদের পাতা উল্টাবে। একবার একটা পত্রিকায় প্রতি সপ্তাহে ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস ছাপা হচ্ছে। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে পত্রিকা স্টলে গিয়ে দেখে সেই পত্রিকাটা নেই। বাসে চড়ে মিরপুর ১ নম্বর চলে গেছে। সেখানেও কোনো স্টলে নেই পত্রিকাটা, বিক্রি হয়ে গেছে। আবার বাসে চড়ে চলে গেছে শ্যামলি সিনেমা হলের কাছে তখন একটা পত্রিকা স্টল ছিল, সেখানে। কিন্তু সেই পত্রিকা নেই। এরপর চলে গেছে ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে একটা পত্রিকা স্টল ছিল, সেখানে। পেয়ে যায় কাঙ্খিত পত্রিকা। শিশু পাতা না দেখেই কিনে ফেলে পত্রিকা। ঘটনার ক্লাইমেক্সটা সেখানেই, পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে দেখে বিজ্ঞাপনের কারণে ওইদিন শিশু পাতা বের হয়নি। মন খারাপ করে আবার মিরপুর ১০ নম্বরের উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে । বাসে ওঠার পর খেয়াল হয় পরণে তার বাসায় পরা বাটিকের লুঙ্গি আর শার্ট। লেখালেখির চল্লিশ বছর হতে চলল এখনও নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখার তীব্রতা কমেনি । ছোটবেলা কুকুর কামড়ে ছিল বলে কুকুর আর অতিরিক্ত উপদেশ দেয়া মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। কথা কম বলে মানুষকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করাই তার একজীবনের সাধনা, বলা যেতে পারে তার: ধ্যান: বা: ব্রত।
সারওয়ার-উল-ইসলামের জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ সালে, নানাবাড়ি দিনাজপুরে। পৈতৃকবাস মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বেজগাঁও গ্রামে। পিতা প্রয়াত আব্দুল মজিদ। মাতা প্রয়াত সাহান আরা বেগম। শিশুসাহিত্যের সব শাখায় স্বচ্ছন্দ বিচরণ। পেয়েছেন শিশু একাডেমীর অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার। দু’বার পেয়েছেন নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার। ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ করেছেন। প্রিন্ট মিডিয়ায় চাকরি করেছেন বিশ বছর। বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭০। ১৯৮৪ সাল। থেকে লিখছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের ছােটদের পাতাসহ শিশুদের সব ম্যাগাজিনে। লিখেছেন টেলিভিশনের জন্য নাটক। কয়েকটি গানও লিখেছেন। স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে থাকেন ঢাকার মিরপুরে। মানুষ পড়তে ভালােবাসেন বেশি। উপভােগ করেন মানুষের ভণ্ডামি।