বাবার হাতটা ধরে ফেলল ওয়াজিহা। ‘বাপি আমার পাশে বসোনা একটু।’ মুচকি হেসে উঠতে গিয়ে আবার বসে পড়লেন রহমান সাহেব। ‘আচ্ছা মা বসছি, তুই কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করবি না একদম। আমি বেঁচে আছি তো এখনও, আমি বেঁচে থাকতে সব চিন্তা তোকেই কেন করতে হবে পাগলি।’ চোখ ছলছল করে উঠল ওয়াজিহার, অশ্রু লুকানোর চেষ্টায় চোখ চুলকানোর ভান করতে লাগল। ‘আমি জানি বাপি, তুমি থাকতে আমার কোনো চিন্তা নেই।’ মেয়ের পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন রহমান সাহেব। ওয়াজিহা ভাবতে লাগল, বাবা বেঁচে থাকলে কি এভাবেই আমার পাশে থাকতেন? এভাবেই ভালোবাসতেন? নাকি এর থেকে বেশি? নাকি এর থেকে কম?
রহমান সাহেব ওয়াজিহার মাকে বিয়ে করার পর থেকে এক মুহূর্তের জন্য ও ওয়াজিহাকে বাবার অভাব বুঝতে দেননি। জন্ম না দিয়ে ও কোনো কোনো পুরুষ বাবার ভূমিকা পালন করতে পারে এরকম ঘটনা বিরল কারণ আমাদের সমাজ নেতিবাচক ঘটনাকে ভাইরাল করে ইতিবাচক ঘটনাগুলো চাপা দিয়ে রাখে অতিরঞ্জিত সমালোচনায়। মানুষের আস্থার জায়গা, নতুন করে বাঁচার শক্তি, ভালোমানুষ খুঁজে পাওয়ার অপেক্ষাকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয় আমাদের তথাকথিত সমাজ। তাই মাকড়সা ছয়বার পড়ে গিয়ে সপ্তম বারে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলেও মানুষ পারে না কারণ মানুষকে উল্টো দিকে টেনে নেওয়ার জন্য মানুষ থাকে।
সুমাইয়া করিম, এমবিএ, হিসাববিজ্ঞান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। শিক্ষকতায় নিয়োজিত আছেন। বই পড়া এবং লেখালেখি করার মাধ্যমেই জীবনকে উপভোগ করেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন কিশোর পত্রিকায় লেখালেখি করতেন যার মধ্যে কিশোর তারকালোক অন্যতম। বর্তমানে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকাসহ মাসিক পত্রিকায় লেখালেখি করছেন। চন্দ্রবিন্দু, গল্পের এপার ওপার, কবিতায় এপার ওপার সংকলনে স্থান পেয়েছে তার লেখা গল্প, কবিতা। তার লেখা পাঠক সমাদৃত কাব্যগন্থ ‘নিঃশব্দে এসেছিল সে’ এবং উপন্যাস ‘গল্পের আড়ালে জীবন’ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ ও ২০২০ অমর একুশে বইমেলায়। তিনি লেখার মাধ্যমে নিজের উপলব্ধিকে পৌঁছে দিতে চান পাঠক মহলে। গল্পের মাধ্যমে প্রেরণ করতে চান মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা যা জীবন বদলাতে না পারলেও হয়তো জীবনের অংশবিশেষ বদলে দিবে।