বিজ্ঞানী-কবি বা কবি-বিজ্ঞানী যেভাবেই অভিহিত করি-না কেন, রেজাউর রহমান (প্রফেসর ড. রেজাউর রহমান, পদার্থবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) একজন জাত-কবি। তাঁর রচিত জামদানি হৃদয় কাব্যগ্রন্থের প্রায় প্রতিটা কবিতাতেই তাঁর কবিসত্তার প্রতিফলন লক্ষ করবেন কাব্যামোদী পাঠক। জামদানি হৃদয়-নামকরণে কবির রোমান্টিক চেতনার প্রকাশ পেলেও কাব্যগ্রন্থটিতে নানা স্বাদের কবিতা রয়েছে। কবির নিজ হৃদয়ের ভাবনা ছাড়াও এখানে তাঁর সমাজ-রাজনীতি ভাবনা, দেশপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম—সবই সরল কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে। কখনো অন্ত্যমিলে, কখনো গদ্যছন্দে বা টানা গদ্যে বা জুতসই শব্দবিন্যাসে প্রকাশিত তাঁর ভাবনাগুলো পাঠকের ভাবনাকে উদ্বেলিত করবে। উপমহাদেশের অন্যতম- প্রধান আধুনিক কবি নিসিম ইজিকিয়েল বলেছেন ‘‘The Best Poets wait for words”। রেজাউর রহমান-এর কবিতায় শব্দচয়নে বুঝি তিনি নিসিম ইজিকিয়েলের প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন করেছেন। বাহুল্যবর্জিত সুপ্রযুক্ত শব্দাবলির বন্ধনে তাঁর প্রতিটি কবিতা—দীর্ঘ বর্ণনামূলক হোক, কী ছোট গীতিকবিতা হোক - বোদ্ধা কাব্য পাঠকের অন্তর-মন ছুঁয়ে যাবে সুনিশ্চিত। “বাঁধ ভাঙার আগে আগে এলে তুমি এলে/বৃষ্টির ফলার মতো, ধাবমান ঈগলের মতো” (জামদানি হৃদয়), “স্থির হতে শেখোনি তাই-/ধরতে পারোনি জোছনার কণা, কবিতার রেণু” (এই অস্থির পথচলা), “বাস, এতটুকুন সামান্য চাওয়াকে অসামান্য ভেবে নিয়ে/নিজেকে দুষ্প্রাপ্য করে তুললে/বলো এ আর এমন কী বেশি চেয়েছি যে তুমি দিতে পারোনি?” (সামান্য চাওয়া), “মাথা বিকায় ভুল আদর্শে কৌটা ভরে/নষ্টকড়ি নষ্টসেনার পিরিত করে” (পাগলামি), “যে ক-টা দিন বাঁচি-/তোর নয়নের রোশনি বাণে/আগুন রূপের মোহন টানে/মায়ার ছকে বন্দী থাকার এ জীবনটাই যাচি” (যে ক’টা দিন আছি) এ রকম আরো আরো পঙক্তি উদ্ধৃত করে দেখানো যাবে কতটা সচেতনভাবে কবি তাঁর শব্দ চয়ন করেছেন। কবি ‘চোখনি মাছের সাহস’ দেখেন, দেখেন ‘ডলফিন সাঁতার বিলাস’। পৃথিবীর সব বাবাকে উপস্থাপন করেন এটা বলে : “সব বাবারাই/মেয়ের কাছে গোবেচারা বুদ্ধুই রয়” (যাদু সোনা, লক্ষ্মীসোনা)। ‘আমাদের কাজী স্যার’ কবিতায় যেমন স্কুল-শিক্ষকের প্রতি অপার শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি নদী/পরিবেশ-খেকোদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে ‘নির্জলা ফাঁসি চাই’ কবিতায়। ‘‘শ্যাওলা সময়”, “বালির হৃদয়”, “ফিকে-জোছনা ঘ্রাণ”, “ঐশ্বরিক রৌদ্র”, ‘‘জলে পোড়া”— এরূপ নতুন শব্দ-বন্ধ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রচলিত শব্দ-বন্ধের পাশাপাশি। মাইনুল হাসান চৌধুরী প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান (অবসরপ্রাপ্ত) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ড. এ কে এম রেজাউর রহমান ১৯৭০ সালেরা পহেলা ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বারেরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আলী আকবর একজন সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন এবং মা মোসাম্মৎ রোকেয়া বেগম একজন গৃহিণী। কর্মজীবনের প্রারম্ভে তিনি বিসিএস (শিক্ষা)-এ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, নোয়াখালি কলেজ, ভাওয়াল বদরে আলম-সহ সরকারি বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে- কর্মরত আছেন। তিনি নিউক্লীয় পদার্থবিদ্যার প্রায়োগিক কিছু বিষয় (নিউক্লিয়ার মেডিসিন, রিয়েক্টর ম্যাট্যারিয়েল, নিউক্লিয়ার এস্ট্রোফিজিক্স) নিয়ে গবেষণা- কর্মে যুক্ত রয়েছেন। তাঁর সহধর্মিণী নাহিদা আক্তার চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনায় নিয়োজিত।