আজিম নামের একজন স্বল্পশিক্ষিত কৃষক বাড়িতে যুবতী স্ত্রী এবং ১১ মাসের কন্যা সন্তান পরিকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য ভারতে চলে যায়। যুদ্ধ শেষে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে প্রতিবেশি এক চাচার কাছে সে জানতে পারে গত ভাদ্র মাসের বন্যার সময় সারা গ্রাম যখন বানের পানিতে ডুবে ছিল তখন কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে তার কন্যা পরি মারা গেছে। দুঃখের কাহিনি এখানেই শেষ না। মিলিটারীর ভয়ে গ্রামের সব লোক পালিয়ে থাকায় তাকে কবর দেওয়াও সম্ভব হয়নি। একখন্ড কাপড়ে জড়ায়ে অভাগা মা তাকে বানের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। এই কথা শুনে আজিম চিৎকার করে বলতে থাকে কি বলেন চাচা? এই দুঃসহ বেদনা আমি কেমনে সইবো। তারপর পাগলের মতো প্রলাপ বকতে বকতে সে বলতে থাকে যুদ্ধে বন্ধু আবুলসহ কত সহযোদ্ধা শহীদ হলো। আমি কেন শহীদ হলাম না। তাহলেতো আমাকে এতো অসহ্য যন্ত্রনা ভোগ করতে হতো না। এই হৃদয়ভাঙা ব্যথা আমি কেমনে সইবো। আমার মতো অভাগা মুক্তিযোদ্ধা বুঝি এই বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। চাচা বলে, কি বলো বাবা। তুমি অভাগা হতে যাবে কেন? দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য যুদ্ধ করে তোমাদের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধারাই স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে এসেছে। তুমি আমাদের গ্রামের গর্ব। চাচার কথাতেও আজিমের অবুঝ মন বুঝ মানে না।
জিয়াউল হক মাতা: আজিজা খাতুন, পিতা হাজী কিয়ামউদ্দিন বিশ্বাস, ১৩ এপ্রিল-১৯৫৪ তারিখে খোঁকড়া, পাবনায় জন্ম। লেখাপড়া করেছেন বাঁশেরবাদা হাই স্কুল, ঈশ্বরদী, পাবনা, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ পাবনা। কলেজে পড়াকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। স্বাধীনতা-উত্তর কালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা আমিনউদ্দিন আইন কলেজ হতে এলএলবি ডিগ্রি লাভ। ১৯৮৩ সালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকুরীতে যোগদান এবং ২০১৬ সালে জেলা-রেজিস্ট্রার পদ হতে অবসর গ্রহণ। স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত। স্বাধীনতা উত্তর কালে মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা কবিতা ও গল্প বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকে কবিতা, ভ্রমণকাহিনি, উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গবেষণামূলক গ্রন্থ লেখার কাজে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেছেন। প্রকাশিত গ্রন্থসমুহ: জ্যোৎস্নাভরা রাতে, কাব্যগ্রন্থ। গিরিঝরনা বাংলাদেশ, ভ্রমণকাহিনি। (১) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা, (২) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা-২, (৩) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা-৩, (৪) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা-৪, (৫) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা-৫, (৬) শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা-৬, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থ। রক্তে ভেজা শার্ট, মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস। (১) হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ইতিহাস, (২) বাংলাদেশের পাহাড়শুমারি, গবেষণামূলক গ্রন্থ। মোট গ্রন্থ সংখ্যা: ১২।