থমাস হাইল্যান্ড এরিকসেন ও ফিন সিভার্ট নিয়েলসেনের A History of Anthropology বইটি নৃবিজ্ঞানের মূলধারার ইতিহাসের পাশাপাশি উপেক্ষিত চিন্তাধারাগুলোর ওপরও আলোকপাত করে। আঠারো, উনিশ শতকের পশ্চিমা ‘আলোকময়তা', ‘রোমান্টিকতাবাদ’, ‘ভিক্টোরীয়’ নৃবিজ্ঞান, টায়লর ও মর্গানের বিবর্তনবাদী সংস্কৃতিতত্ত্বের সারমর্ম প্রদানের পাশাপাশি পশ্চিমা জাতীয়তাবাদ ও উপনিবেশবাদের সাথে নৃবিজ্ঞানের বহুমাত্রিক সম্পর্কের ব্যাপারেও এখানে পর্যালোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। একই সঙ্গে ১৯২০-এর দশক থেকে নৃবিজ্ঞানে ব্যাপ্তিবাদ, ক্রিয়াবাদ, কাঠামোবাদ, নব্য-মার্কসবাদ, ব্যাখ্যাতত্ত্ব, ডিসকোর্স অ্যানালাইসিসসহ বিভিন্ন তাত্ত্বিক গঠন, রূপান্তরের আলোচনাও বইটিতে উঠে এসেছে। আরও আলোচিত হয়েছে বিভিন্ন নৃবিজ্ঞানী ও তাত্ত্বিকদের সংক্ষিপ্ত জীবনী, যা একটি জ্ঞানকাণ্ড হিসেবে নৃবিজ্ঞান বিকাশের গতিধারা মূল্যায়নকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে স্থাপন করতে সহায়তা করে। বইটি নৃবিজ্ঞানের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং এ বিষয়ে আগ্রহী সাধারণ পাঠককে জ্ঞানকাণ্ডটির উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে একটি সার্বিক ধারণা দিতে সক্ষম। নৃবিজ্ঞান নিঃসন্দেহে সামাজিক বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা। তথাপি বাংলা ভাষায় বিষয়টির চর্চা অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সামগ্রিক পাঠকের কাছে প্রায় অচর্চিত সেই বিষয়টিই সহজ গদ্যে আনন্দ অন্তঃলীন অনুবাদ করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে লেখাপড়া করেছেন। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে একাধিক বই তিনি অনুবাদ করেছেন; সেগুলো বাংলাদেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশ হয়েছে । নৃবিজ্ঞানের ইতিহাসও আনন্দ অন্তঃলীন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বাংলাভাষী পাঠকের জন্য অনুবাদ করেছেন। ফলে বইটি কেবল নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীই নয়, পাঠমনস্ক যে কারো জন্য দরকারি একটি কাজ।