নাট্যকার নজমুল হোসেন আকাশ এর প্রকাশিত দু’টি নাটক-এর একটি রূপান্তরিত নাটক আর অন্যটি তাঁর মৌলিক রচনা। প্রথমটি কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যয় এর বিখ্যাত ছোটগল্প প্রাগৈতিহাসিক অবলম্বনে রচিত নাটক ‘প্রাগৈতিহাসিক’ এবং দ্বিতীয়টি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উপজীব্য করে রচিত নাটক ‘চেতনায় স্বাধীনতা’। প্রাগৈতিহাসিক বাংলা সাহিত্যের বহুল পঠিত গল্পগুলোর একটি। এমন একটি জনপ্রিয় গল্পের নাট্যরূপ দেয়া যে কারো জন্যই বিপজ্জনক। কারণ এতে পাঠকের চেয়ে বিচারকের সংখ্যা নেহায়েত কম থাকে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই লঘুপাপে গুরুদণ্ড পেতে হয়। এছাড়া সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের সামাজিক ও পারিপার্শিকতাকে মঞ্চ নাটকের উপযুক্ত করে তোলা এবং এদের মনের ভাবকে ডায়লগে রূপ দেয়া ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। নাট্যকার অত্যন্ত সফলতার সাথে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে গল্পটির নাট্যরূপ করেছেন। এটা ভীষণ আনন্দের খবর। চেতনায় স্বাধীনতা নাটকটি বাঙালি জাতির আজন্ম লালিত স্বপ্ন এবং না-পাওয়ার বেদনার করুণ ইতিবৃত্ত যেন। মামার কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধের বারুদমাখা স্বপ্নের অনেকগুলো ফুল আজও ফোটেনি। জানিস রোজেন, মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে পড়ি, ভাবি এ কেন হলো! কেন আমরা প্রাণখুলে হাসতে পারলাম না। কেন আমরা শোষণের জালে আবারও বাঁধা পড়লাম, কেন আমরা বুঝলাম না, এই দেশ আমার, এই দেশের মাটি আমার।’ তবে নাটকটি শেষ পর্যন্ত যুব সম্প্রদায়ের একতা এবং দৃঢ়তায় সকল রকমের না-পাওয়ার বেদনা, অপ্রাপ্তি, হতাশা, সামাজিক অস্থিরতা এবং নানান অসঙ্গতি দূর করে পাঠকের মনে আশার-আলো সঞ্চার করতে পেরেছে বলে মনে হয়।