প্যারী। পরমা সুন্দরী। পরগনার জমিদার কন্যা। বৃটিশ আমলার ঘুম হরণকারী। আত্মসংযমী চিরকুমারী নীলদ্রোহী জমিদার। তার সাথে আছে রামলোচন, শেখ আমীর আলী, সা-গোলাম সহ অন্যরা। আঠারো শতকের শুরুতে কুষ্টিয়া অঞ্চলে বৃটিশ ব্যবসায়ীরা জমিদারদের জমি লীজ বা পত্তনী নিয়ে কৃষকদের দিয়ে জোর-জলুম করে নীল চাষে বাধ্য করতো। কুষ্টিয়া অঞ্চলের ইংরেজ বণিক যুবক নীলকর টমাস আইভান কেনী ছিলো চরম অত্যাচারী। নারী লোভী। প্যারী সুন্দরীর প্রতি তার লোলুপ দৃষ্টি। যে ভাবেই হোক তাকে বশ করতে হবে। কোন ভাবেই তাঁর সাথে পেরে উঠছে না কেনী। কেনীর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে ১৮৫৯ সালে কুষ্টিয়ার কৃষকরা কেনীর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিদ্রোহ করে। প্যারী সুন্দরীর নেতৃত্বে কৃষকরা প্রাণপণ লড়াই শুরু করে কেনীর বিরুদ্ধে। অন্য সব জমিদাররা যখন মুখে কলুপ এটে বসে আছে তখন এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন আমলা সদরপুরের দেশপ্রেমিক নেত্রী প্যারী সুন্দরী। জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসা আর টানটান উত্তেজনায় সশরীরে ময়দানে ছুটে যান অকুতোভয় প্যারী। নীল চাষের পরিবর্তে একমুঠো সোনার ফসল ঘরে তোলার জন্য এতদাঞ্চলের কৃষকরা যে সংগ্রাম শুরু করেছিল তা ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে। বৃটিশ দারোগা হত্যার মধ্য দিয়ে কৃষকের জয় হলেও প্যারী সুন্দরীর জীবনে নেমে আসে ছোপ ছোপ অন্ধকার। প্যারী সুন্দরী ইতিহাস নয়। বলা যেতে পারে ইতিহাসের প্রতিফলন বা ইতিহাস- আশ্রয়ী উপন্যাস। কাহিনীটি আধার মাত্র।