কবিতার সঙ্গে দর্শনের অনাদি আত্মীয়তা। তাই দেখা যায় পৃথিবীর মহৎ কবিরা যেমন দার্শনিক, তেমনি বহু দার্শনিকও কবি। উভয় প্রজাতিই জগৎ—জীবন—প্রকৃতি—মহাবিশ্বের ভাষা ও রহস্য উদঘাটনে নিজ নিজ ভঙ্গি ও ভাষায় তৎপর। কিন্তু কবিদের দর্শনসাধনা পরোক্ষ; কবিতার শর্ত পালনের ভিতর দিয়ে তা করতে হয়। তাই শত—শতাব্দী প্রাচীন রুমি—হাফিজ তাঁদের তাবৎ দার্শনিকতা কবিতার ভিতর দিয়েই জারি রাখেন। এমনকি বিশ শতকী এলিয়ট—ফ্রস্ট—জিবরান—জীবনানন্দ তাঁদের কবিত্বশক্তি বিনে আমাদের চৈতন্যে এত অভিঘাত তৈরি করতে পারতেন না। কবিত্বের ভিতর দিয়েই দর্শনবীজ তাঁরা বিভিন্ন পরমবাক্য আকারে সৃষ্টি করেন, পরিণামে কবিতা ও দর্শন এক অবিচ্ছিন্ন যুগলে পরিণত হয়। এসব কথা মাথায় এল কবি মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীরের কাব্য ‘আমরা কবে লালন হব’ পড়ে উঠতে গিয়ে। টানা গদ্যে, টান টান বাক্যে লেখা এই বইয়ের সমূহ কবিতার ভিতর দিয়ে একটা দর্শনভ্রমণ সম্পন্ন করে উঠি। উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যাক নাম কবিতাটিকেই: ‘পাখিদের আমি ঈর্ষা করি। ওদের কোন রাষ্ট্র নেই, নেই সংবিধানের বালাই। পাখিদের কিতাব নেই, ধর্ম নিয়ে ওরা ভাববে কেন! আনন্দ খুঁটে খুঁটে ওরা দেয় জীবন পাড়ি। ডানাহীন এক পাখির নাম লালন। তার কোন কিতাব ছিল না, ছিল কি? গানে গানে দেহাতি লালন হেঁটে চলে, আমি আজো দেখি।’ কিংবা নেওয়া যাক ‘ইশারায়ই কাফি’: ‘জিনকোড বেয়ে বেয়ে বাবা আদম তক গিয়েছি। তিনি বললেন, ‘ইবলিশ নিমিত্তমাত্র, এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরাই... আহা, গন্দমের স্বাদ! অনুগত হয়ে ঈশ্বরই বা কে হতে পারে; বরং...’ ইশারায়ই কাফি। লঙ্ঘন করতে করতে এসো ঈশ্বর হয়ে যাই।’ পাঠক, আসলেই ইশারায় কাফি। বাকিটুকু আপনার জন্য রইল। সৈকত হাবিব কবি