সারা জীবনে একটি পাঠ্যপুস্তক লিখিলাম। পুস্তকটি প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো হইল, বলিতে পারি না। তেত্রিশ বৎসর বয়সে যে রচনার সূত্রপাত হইয়াছিল প্রায় তিনটি দশক পর এই সংস্করণটির চূড়ান্ত প্রুফ সংশোধনের কাজটি পর্যায়ক্রমে দুই বৎসর ধরিয়া করিতেছি। একেবারে অন্য রকম না হইলেও মলাটে সংস্করণ হইয়াছে বলা যাইবে না। কিছু কিছু পদ্ধতিগত বিষয় প্রায় প্রতিটি অধ্যায়ে সীমিত পরিসরে সংক্ষেপে সংযুক্ত হইয়াছে, যুক্তিবুদ্ধি ও শক্তিতে যতটা কুলায় ততটা ঘষা মাজা হইয়াছে। ভারতীয় দর্শনের ঐতিহ্যগত লক্ষ্য, চিরন্তনতা, স্বকীয়তা ও আন্তর্জাতিকতা জ্ঞাপনের অনুরোধে সমসাময়িক কিছু কিছু বিশিষ্ট ভারতীয় ও বহির্বিশ্বের দার্শনিক ও গবেষকের মতামতের ব্যাখ্যা পূর্বাপেক্ষা স্পষ্টতর হইয়াছে মনে করি । লোকমুখে অধুনা প্রচলিত কোন কোন স্বাভাবিক ভাষার অপ্রচলিত প্রাচীন পরিভাষায় যেমন দর্শনের চিরন্তন কিছু ভাবধারা, আদর্শ ও প্রণালীর সন্ধান পাওয়া সম্ভব, প্রাকৃত্-পালি-সংস্কৃত ভাষায় রচিত কিছু কিছু শাস্ত্রগন্থেও তেমন কিছু কিছু কার্যক্ষম দার্শনিক চিন্তার আকার, প্রকার ও বিধি-বিধানের ব্যবহার আছে। বাংলা ভাষার শক্তিমত্তায় সে-সব চিন্তার আকার ও সাংগঠনিক প্রবণতার উত্তরাধিকার অনুভব করা যায়। মূলত মথুরা অঞ্চলের শৌরসেনী প্রাকৃত্ হইতে ব্রজভাষার উদ্ভব হইয়াছে। বাংলা ভাষায়ও অনুরূপ মরমিয়া ভাব আছে। বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশের স্তরে স্তরে গভীর মননশীল ভাব ও পদ্ধতিও প্রক্রিয়াভূত আছে। বাস্তব প্রয়োজনে দর্শন দেশ-কালের ব্যবধানের সেতু-বন্ধন করে। প্রথম সংস্করণে তুলনার যে-সব আঙ্গিক ও পরিপ্রেক্ষিত ছিল মূলানুগ স্থাপনা ও পারস্পারিক সম্পর্ককে অক্ষুণ্ণ রাখিয়া সমালোচনার দিগন্ত সামান্য প্রসারিত হইয়াছে। তৎসত্ত্বেও বলা উচিত, সহমর্মী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ ও শিক্ষকসমাজ প্রথম সংস্করণটিকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়া ইহার মূল পরিকল্পনার আদৌ কোন পরিবর্তন করি নাই । কৌশলগত অর্থে কিছু কিছু সারণি, তালিকা, পাদ-টীকা যুক্ত হইয়াছে মাত্র। ছাত্র- ছাত্রীর পঠন-পাঠনকে সাহায্য করিতে পারে এইটুকুই ইহার ইতিবাচক দিক। অল্প বয়সের রচনা বলিয়া উদ্যমের ঘাটতি ছিল না, খুব কিছু মৌলিকতা থাকিবার কথা নয় । সময়টি ছিল ১৯৭৪-৭৬। এই শ্রমের ফলে অব্যবধানে বৌদ্ধ ন্যায়শাস্ত্রে গবেষণা করিতে সাহস করিয়াছিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে (১৯৭৭-৮১) প্রফেসর শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী মহাশয় বাংলা একাডেমীর অনুরোধে হস্তলিখিত পুস্তকটিকে মানুষ