আজ তনুর স্বামী মারা গেছে! আজ থেকে সে বিধবা! আর সে কি না কি সব আবোল-তাবোল ভাবছে! মাথাটা হালকা ঝাঁকি দিয়ে তনু তার মাথা থেকে এইসব আজেবাজে ভাবনা দূর করার চেষ্টা করল। কিন্তু মাথা ঝাঁকিয়েও তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না মনে হয়। কোনো না কোনোভাবে তার মাথায় আজব-আজব চিন্তা-ভাবনা কোত্থেকে চলে আসছে! জোর করেও মনের মধ্যে কোনোরকম দুঃখবোধ আনতে পারছে না সে। কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভ‚তি তার সারা শরীরে খেলা করছে। এই অনুভ‚তির সাথে মোটেও সে পরিচিত নয়। না, তনু এত বড় অন্যায় করার পরও শাহেদ একদম তার গায়ে হাত তোলেনি। শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করতে আঁচড় কাটেনি। কোনোরকম দাঁত বসিয়ে কামড়ে দেয়নি। রাগের চরম পর্যায়ে ধস্তাধস্তি করেনি। এমনকি সামান্যতম ছুঁয়ে দেখেনি পর্যন্ত। শুধুমাত্র সারারাত গায়ে কোনো কাপড় ছাড়া ফ্লোরে বসিয়ে রেখেছিল। একটা মেয়েকে মানসিকতার একদম গভীরের শেকড় কেটে মেরুদÐ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য মনে হয় দিনের পর দিন, বছরের পর বছর গায়ে হাত তুলে নির্যাতন করার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। মানসিকভাবে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দিতে এমন একটা রাতই যথেষ্ট। কখন বিকেল গড়িয়ে রাত নামবে? কখন শাহেদ অফিস থেকে ফিরবে? সে কি আজকেও তাকে নিয়ে ঘুমোতে যাবে? শাহেদের হাতের নখগুলো কি আজ কেটেছিল? আঁচড়ের গভীরতা কি খুব বেশি হবে? কামড়ের সংখ্যাটা-ইবা কতগুলো হবে? গায়ে কাপড়বিহীন কতক্ষণ থাকতে হবে তাকে? সময়টা কি কাল রাতের চাইতেও দীর্ঘ হবে?
আফরােজা খানম তন্দ্রা। জন্ম টাংগাইল জেলার পােষনা গ্রামে। শৈশব, কৈশাের কেটেছে টাংগাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়ায়। তিন ভাইবােনের মধ্যে সবার ছােট এবং একমাত্র মেয়ে। এসএসসি বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং এইচএসসি কুমুদিনী সরকারি মহিলা কলেজ। অনার্স, মাস্টার্স ‘চাইল্ড ডেভলপমেন্ট এন্ড ফ্যামিলি রিলেশনশিপ’ বিভাগ, হােম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে। মূলতঃ এই সাবজেক্টে পড়াশােনা করার দরুণ মানুষের মস্তিষ্কের চেতন, অচেতন এবং অবচেতন এই তিনটা ধাপ সম্পর্কে জানার ও শেখার সুযােগ। হয়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে ফ্যামিলি কাউন্সিলিং-এর উপর কাজ করার সময় মানুষের অবচেতন মনের হাজারাে লুকায়িত বিষয়গুলাে সম্পর্কে আগ্রহ জন্মে। লেখাপড়া এবং কাজ, এই দু'য়ে মিলেই ‘অবচেতন' গল্পগুলাে সূত্রপাত। আরাে আগ্রহ রয়েছে রিডিং, ট্রাভেলিং, ফটোগ্রাফি এবং ভিন্নধর্মী রেসিপি শেয়ারিং-এ।। ২০১৯ এবং ২০২০ এ প্রকাশিত কয়েকটি গল্পসমগ্রে তার বেশ কয়েকটা ছােটগল্প প্রকাশিত এবং প্রশংসিত হয়েছে।