রিডিলিন নামের ভয়ংকর এক অজানা প্রাণী আক্রমণ করেছে পৃথিবীকে। পিঁপড়ার মতো আকারের এই প্রাণীগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে পৃথিবীর সকল ধাতব জিনিসকে। মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, গাড়ি, বাড়ি, বিমান, ইলেকট্রিক খুঁটি, সমরাস্ত্রসহ যত ধাতব জিনিস আছে সবকিছুকে অকার্যকর করে দেওয়াই যেন রিডিলিনের কাজ। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা, ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন, ভেঙে পড়ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। এতে এক মহাবিপর্যয় নেমে আসে পৃথিবীতে। আর এই মহাবিপর্যয়ের নাম ‘রিডিলিন মহাবিপর্যয়’। বাংলাদেশি ছাত্র নাফিন পড়তে গিয়েছিল ইংল্যান্ডে। সেখানে পরিচয় হয় আর এক বাংলাদেশি ছাত্রী নাইশার সাথে। তাদের ভালোবাসার অগ্রযাত্রার পথে সবকিছু তছনছ করে দিতে থাকে রিডিলিন মহাবিপর্যয়। চরম খাদ্যাভাব আর জাতিগত দাঙ্গা শুরু হওয়ার কারণে হতবিহ্বল সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশি কাউকে অবস্থান করতে দেবে না ইংল্যান্ডে। তাই দেশে ফিরে আসবে বলে মনস্থির করে নাফিন আর নাইশা। কিন্তু এরই মধ্যে সকল ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে জাহাজ কিংবা বাস চলাচল। তাই ঘোড়ায় চড়ে আর পায়ে হেঁটে দেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা করে নাফিন। তাকে ফিরে আসতেই হবে। কারণ সে তার মায়ের একমাত্র সন্তান এবং তার মা তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। যাত্রা শুরুর পরই তারা বুঝতে পারে গন্তব্যে পৌঁছান কতটা দুঃসাধ্য? কারণ তারা যে আর আধুনিক পৃথিবীতে নেই, অবস্থান করছে আদিম পৃথিবীতে যেখানে রিডিলিনের ভয়ে ধাতুর তৈরি সামান্য একটা ছুরিও সাথে রাখা যায় না! শেষ পর্যন্ত কী নাফিন আর নাইশা ফিরতে পেরেছিল বাংলাদেশে? আর কী পরিসমাপ্তি ঘটেছিল রিডিলিন মহাবিপর্যয়ের? নাকি রিডিলিনই দখল করে নিয়েছিল সম্পূর্ণ পৃথিবীকে?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।