কল্পনা এবং আবেগের সাধারণ গতিবিধিকে প্রশ্রয় না দিয়া কোলরিজ আরও বেশি চাপে ফেলছিলেন নিজেকে। তারই সমসাময়িক জনাব ওয়ার্ডসওয়ার্থ যেখানে কবিতা বানাইতেছেন হাতের নাগালে পাইয়া ফেলা সহজলভ্য এবং দৃশ্যমান প্রকৃতিকে নিয়া, সেখানে কোলরিজ বানাইতেছেন প্রকৃতির অদৃশ্য এবং আজগুবি উপাদানগুলারে নিয়া সাহিত্য। সে কবিতার মধ্যে টাইনা আসতেছেন মরা মানুষগো জীবিত হয়া ওঠার সিন, ফেরেশতাগো কথোপকথন, ভ‚তের জাহাজসহ আরও নানান ধরণের আজগুবি চিত্রকল্প। আর এইসব ঘটনাকে তিনি গাঁথতেছেনও খুব নিখুঁতভাবেই। কোথাও কোনো দৃশ্যের পতন নাই। একটা ঘটনা থেকে পরবর্তী ঘটনায় যাওয়া যাইতেছে কোনো প্রকারের মনোযোগ-কর্তন ছাড়াই বা হোঁচট না খেয়ে। আর এইগুলাই হইল কঠিন, এইসব কল্পনাপ্রসূত অতিলৌকিক ঘটনাগুলাকে একই সমতলে নির্মাণ করতে পারাটাই হইল কোলরিজের কাঠিন্যটা। তবে তিনি যে এই কবিতাটাকে নির্মাণের মাধ্যমে ধর্মপ্রচারের একটা ব্রত নিয়া রাখছিলেন মনে মনে, সেইটা যে-কেউই আমরা অনায়াসেই ধইরা ফেলতে পারবে কাবতাটার প্রথমদিকের পাঠেই। তাহলে কি এইটারে আমরা একটা রিলিজিয়াস পয়েট্রি হিসাবেও আমলে নিতে পারি? আমার তো মনে হয় এটা আমরা অবশ্যই পারি। কবিতাটাতে ভৌগলিক অংকবিদ্যারও নিখুঁত পারদর্শিতা দেখাইছেন কোলরিজ। পুরা কবিতার মধ্যেই কোনো স্থানের নাম তিনি উল্লেখ করেন নাই সরাসরি। কিন্তু বিভিন্ন নেরেসন তৈরির মাধ্যমে একটা চিন্তা করার স্পেস তিনি তৈরি কইরা দিসেন, এবং বারবার যেন তিনি পরোক্ষভাবে প্রশ্নই করতেছেন পাঠকদেরকে- “বলোতো, আমি কই আছি এখন?” এবং আমরা যদি দুনিয়ার মানচিত্র খুইলা বসি তাহলে আমরা হয়ত কিছুটা খাটাখাটনি কইরা বাইরও কইরা ফেলতে পারব তিনি আদতে কই থিকা কই কই যাইতেছেন তার ওই আধিভৌতিক সমুদ্র সফরটায়। যদিও সেই ভ্রমণটারে সম্ভব করছিল বুড়া একজন নাবিক, কিন্তু দৃশ্যের পিছন থিকা কোলরিজই ঘটনাটাগুলারে ঘটাইতেছেন ওই বুড়া নাবিকের চরিত্রকে নির্মাণ কইরা।