মুক্তিযুদ্ধের সময় আরও অনেকের মতো লেখিকার জীবনও অনেকটাই ওলটপালট হয়ে গেছিল। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ছিল না। বাস্তুহারা, গৃহহারা হয়ে শুধু বেঁচে থাকার নিরলস প্রচেষ্টা ছিল। তা সত্বেও শরণার্থী শিবিরে শিবিরে মুমূর্ষু ও দুঃস্থ শরণার্থীদের সেবা এবং মালদার বাচামারি ক্যাম্প ও কলকাতার গোবরা ক্যাম্পে অস্ত্র ও মেডিক্যাল প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার অদম্য প্রচেষ্টা ছিল। সে সময়কার প্রতিটা ঘটনা তার মনের কোণে গেঁথে আছে আজও। সেই যাপিত জীবনের কাহিনি নিয়েই এই লেখা। যুদ্ধ শুরুর আগে থেকে শেষ হওয়া অবধি জীবনে যা ঘটেছে এবং নিজের চোখে যা সে দেখেছে ও অনুভব করেছে এখানে তাই লেখা হয়েছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশি ও বন্ধুরা যারা যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তাদের কথাও এসেছে এ লেখায়। এসব অভিজ্ঞতার কথা এতোদিন পরিবার পরিজনদের মাঝেই আলোচনায় এসেছে বারবার। আমি নিজে ঊষার স্বামী হিসেবে গত চল্লিশ বছরে এসব ঘটনা ও অভিজ্ঞতার কথা খণ্ড-খণ্ডভাবে অনেকবার শুনেছি। সম্প্রতি সমাজ মাধ্যমে এগুলো নিয়ে কিছু লেখালেখি করেছিল সে। এরপর অনেকেই বই আকারে স্মৃতিগুলো প্রকাশে উৎসাহ দিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটেই বইটি লেখার প্রয়াস। যুদ্ধকালীন সময়ের পটভূমিতে বইটি লেখা তাই সহিংসতার বর্ণনা এসেছে স্বাভাবিকভাবেই। তবে এখানে কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ ও কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ নেই। শুধু সত্য ঘটনা ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পরিবেশ, পরিস্থিতি ও অনুভূতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। পাঠক খোলা মন নিয়ে বইটা পড়বেন এটাই আমার একমাত্র প্রত্যাশা।