শুরুটা কবে হয়েছে তা ঠিকঠাক বলা সম্ভব না। হয়তো এক মুঠো মাটি দেখে শুরু হয়েছিল কিংবা একটা বৃদ্ধ গাছ দেখে। যেদিন একটা বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ কাছে ডেকে বলেছিল-‘এই দেখ এখানেও আছে’ হয়তো বা সেদিনই শুরু হয়েছিল। এমনও হতে পারে, হাওয়ার ঘূর্ণি যেদিন উড়িয়ে নিয়ে কাঞ্চন নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়ে বলেছিল-‘এখানেও’ সেদিনই এর শুরু ছিল। এই শুরুটা এমনই যার অন্ত নেই। তবু এই লেখার যবনিকা টানলাম, আবার নতুন করে শুরু করব বলে। এখন নিজেকেই যদি প্রশ্ন করি কেন এই ৭১? ২০২২-২৩ এ বসে কেন ১৯৭১-এর কথা লিখছি? যার কিছুই নিজের চোখে দেখিনি তা নিয়ে কেন লিখছি? আসলে কেন এই আয়ুক্ষয়ের লেখালেখি তারই তো কোনও যৌক্তিক উত্তর খুঁজে পাই না, সত্যি বলতে খুঁজিও না। শুধু বলতে পারি, যখনই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, আমাদের একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ বা জেনোসাইড নিয়ে কোনও লেখা বা বই পড়ি তখনই ইচ্ছে জাগে আমিও লিখব। হ্যাঁ অনেক শ্রদ্ধেয় লেখক-গবেষক এই বিষয়ে অজস্র গবেষণা করেছেন, অজস্র লেখা লিখেছেন, তবুও আমি লিখতে চাই। বারবার লিখতে চাই। লিখতে লিখতে জানতে চাই। এবার জানতে চেয়েছি দেশের উত্তরের বৃহত্তর জেলা দিনাজপুরের মুক্তিযুদ্ধ ও জেনোসাইড বিষয়ে। এই দেশের অন্যান্য জেলার মতো দিনাজপুরের মাটিও হাজারও শহিদের রক্তে ¯œাত। এই রক্তঋণের দায় লাঘব করতেই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়েছি, পথে-ঘাটে খুঁজে ফিরেছি যুদ্ধের চিহ্ন, শুনেছি একাত্তরের কথা আর লিখে গেছি ৭১। ৭১ আমাদের সবার। ৭১ দ্বিধাহীন দৃঢ় প্রত্যয়ের, থরো থরো আবেগ যার পূর্বশর্ত। এই আবেগে স্পর্শ করেছি কাঞ্চন আর পুনর্ভবার জল, লক্ষ শহিদের রক্ত শুকানো মাটি। আর ৭১ কে কল্পনা করেছি, ঐ সময়ের মানুষগুলোকে কল্পনা করেছি। কল্পনায় বিভিন্ন চরিত্র নির্মাণ করে বলতে চেয়েছি একাত্তরের গল্প। হয়তো গল্পগুলো দরদী, আঞ্জুয়ারা, হায়াতন বিবি, আসমা, জোবাইদা, নাসির, ইয়াসির, আব্বাস, ইদ্রিস মুনসি, কিসমত, ফুলবাবু, টাট্টু মিলন, ফরিদুর কিংবা সবুজের না; অন্য কারও, গল্পগুলো হয়তো দীঘলটারিরও না, অন্য কোনও জনপদের। কিন্তু ৭১-এর গল্পগুলো একাত্তরের।
সাদিয়া সুলতানা গল্পকার। ঔপন্যাসিক। বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামানের সংকলন ও সম্পাদনায় প্রকাশিত আইন অভিধান ‘আইন-শব্দকোষ’ এ তিনি গবেষণা সহকারীরূপে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বিচারক হিসাবে বাংলাদেশ বিচার বিভাগে কর্মরত আছেন। প্রকাশিত গ্রন্থাবলি: গল্পগ্রন্থ: চক্র (২০১৪), ন আকারে না (২০১৭), ঘুমঘরের সুখ-অসুখ (২০১৯), মেনকি ফান্দার অপরাধ কিংবা পাপ (২০২০), উজানজল (২০২২) উপন্যাস: আমি আঁধারে থাকি (২০১৮), আজু মাইয়ের পৈতানের সুখ (২০২০), ঈশ্বরকোল (২০২১), বিয়োগরেখা (২০২২), নীলগর্ভ (২০২৩), ৭১ (২০২৪) প্রাপ্ত পুরস্কারসমূহ: চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার (২০২২), বাংলা একাডেমি পরিচালিত রাবেয়া খাতুন কথাসাহিত্য পুরস্কার (২০২৩)