বর্তমানে মানুষকে একধরনের অস্থির সময়ের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। ব্যক্তি, সমাজ জীবন যেন এক শ্বাপদসংকুলে পরিণত হয়েছে। এর মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও কনটেন্টের দাপট সমাজ থেকে সাহিত্যকে এক রকম বিতাড়িত করে ফেলেছে। এ রকম একটা সময়ে সাহিত্য নিয়ে পড়ে থাকা বা চর্চা করা পাহাড়ি খরস্রোতা নদীর স্রোতের বিপরীতে চলারই শামিল। তবু সমাজে কিছু বোকা লোক থাকে যারা ঠেলে পাহাড় সরানো যাবে না জেনেও সেই কাজ করে যায়। হয়তো এর মাঝেই কোনো আশা তাকে সামনে চলার সঞ্জীবনী দিয়ে যায়। আমি হয়তো তাদের দলেই পড়ি। আমার ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে উৎসাহ জুগিয়েছে আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ। বিজিতের পলায়নবিদ্যা প্রকাশের পর পাঠক মহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয় এবং অল্প দিনের মধ্যে দ্বিতীয় মুদ্রণে যেতে হয়। কাছের ও দূরের বিভিন্ন মহল থেকে লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ পাই। নবীন একজন লেখকের জন্য যা অত্যন্ত সৌভাগ্য ও গর্বের বিষয়। একজন কলমশ্রমিকের কলমে থাকবে প্রান্তিক মানুষ ও তাদের জীবনের গল্প সেটাই স্বাভাবিক। নাট্যকার, ইয়েলো, দেড় ব্যাটারি, সে আসে ফিরে, না আদম না শয়তানসহ অন্যান্য গল্প তারই উদাহরণ। সেই সব গল্পে যেমন আছে দুঃখ, তেমনি আছে প্রেম, তেমনি আছে ছোট ছোট সুখের কম্পন। এই সব নিয়ে আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘বাউরা।’
সাজিদ রহমানের জন্ম উত্তরের জেলা দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। আশির দশকের শুরুতে, ৭ মার্চে। রেলজংশনবিধৌত মফস্বলের সোঁদা গন্ধমাখা কৈশোর শেষে পাড়ি জমান রাজধানীতে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষে থিতু হন প্রজাতন্ত্রের কর্মে। প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ নিয়ে ইংল্যান্ড থেকে মাস্টার্স করার আগে জ্ঞানাঙ্কুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন। এক কন্যা, এক পুত্র ও তাদের জননীকে নিয়ে কর্মস্থলের সুবাদে আরব বেদুইনের মতো তাঁবু খাটান দেশের নানা প্রান্তে। পেশায় সড়কশ্রমিক ও নেশায় কলমশ্রমিক এই গল্পকার মূলত একজন পাঠক। বন্ধুর পথ বেয়ে বেয়ে কিছুটা দৃষ্টিসীমায়, কিছুটা তারও বাইরের হরেক চরিত্র ও তাদের জীবনের দৃশ্যপট আঁকার প্রথম প্রয়াস ‘বিজিতের পলায়নবিদ্যা’।