ইতিহাস ও সভ্যতার বিখণ্ডতা, সাময়িকতা ও সংলগ্নতার জন্য উত্তর-আধুনিকতার কোনও শোক নেই--নেই কোনও আর্তনাদ। পৃথিবী অর্থহীন। সাহিত্য শিল্পকলা এই পৃথিবীতে নিয়ে আসবে কি শান্তি অথবা যথার্থতা--এর উত্তর খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব পাঠকের নিজস্ব স্বাধীন মননে বিরাজমান। উত্তর-আধুনিকতার উত্তর হলো না-বাচক। সাব-অল্টার্ন লেখক পাঠককে এপিকিউরিয়ান আনন্দ দান করতে চান, পাশাপাশি নিজের তাত্তি¡কতার গভীর বুননে আমাদের মনোজগতে ধীশক্তির বিকাশ ঘটান। ধুলোর ফুল গল্পগ্রন্থটি কখনও হাজির হয়েছে ফ্রয়েডের লিবিডো নিয়ে, কখনও এখানে নিৎশে এসেছেন, কখনও গল্পে গল্পে সাব-অল্টার্ন ভোগবাদ, বস্তুবাদ এক করে এখানে পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফ্রেডরিক জেমিসন। সাহিত্যের যাত্রা সতত প্রবহমান। এ প্রবহমানতা মানবমনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সময়ের প্রবহমানতার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে মানুষের কণ্ঠে ও লেখনীতে ভীষণ শক্তিতে উচ্চারিত হতে শুরু হলো সেই সব ক্লেদের কথা, অসুরের কথা, অশুভের কথা। শিল্পের সকল শাখায় দোর্দণ্ড প্রতাপে অভিব্যক্ত হতে লাগল ক্লেদের কথা, অসুরের কথা, অশুভের কথা, মানবের যন্ত্রণার কথা, মানুষের গোঙানির কথা। সাহিত্য মানে নরকের অধিবাসীদের যন্ত্রণার চিৎকার। শিল্প মানে সকল শুভ ও স্বর্গীয়তা হারানোর হাহাকার। ‘ধুলোর ফুল' এখানে এসে তার অনন্যতার কথা বলে। মানুষের ভিতরে একটা মন আছে যা দিয়ে সত্য-শুভ-সুন্দরের বীজ রোপণ করে আবার একটা মানবিকতার শস্যভূমি আবাদ করা যাবে--ধুলোর ফুল সে তত্ত্বই দাঁড় করাতে চায়, সে সত্যই প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তত্ত্ব খুঁজতে গেলেই তথ্য হারায়, সত্য থাকে অন্ধকারে-- তাকে খুঁজতে হয় অন্ধকারেই। এত তত্ত¡, এত মতবাদ--সবই আসে সময়ের তাগিদে। ‘ধুলোর ফুল' এসেছে নিজেই আলাদা একটি ‘সময়' তৈরি করতে।