গানের একটা সঞ্জীবনী শক্তি আছে, যা মানুষকে জাগিয়ে তুলতে পারে, মানুষের ভাবনার খোরাক দেয় আবার গান মানুষকে অমরত্বও দেয়। পাশ্চাত্যে ‘স্টোরি টেল’-এর আবেদন বহুবছর থেকেই, আ আজও প্রচলিত। কোনো খোলা জায়গায় বা কোনো মনুমেন্টের সামনে জনসমক্ষে শিল্পীরা গিটার কিংবা ভায়োলিন নিয়ে দাঁড়িয়ে যান। গানের মর্মার্থ, গান সৃষ্টির পটভূমির গল্প কিংবা গানের সৃষ্টির পরের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গান শুরু করেন। যেমন : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে গেয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন, ববি ডিলান প্রমুখ। গানের এমন ধারা আমরা পেয়েছি এই বাংলায়ও। বলা চলে পরম্পরায়ই পেয়েছি। কবিগান, বৈঠকি গানের আসরে এমন ধারা প্রচলন ছিল, যা আজ প্রায় অস্তমিত। সেই ধারায় অনুপ্রাণিত হয়েই লেখকের এই প্রয়াস। তিনি বেছে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের গান। চেষ্টা করেছেন রবীন্দ্রনাথের বহুশ্রুত গান এবং রবীন্দ্রনাথের গানের মর্মকথা নিয়ে কাজ করতে। এই বইতে রবীন্দ্রনাথের বহুশ্রুত গানের পটভূমির কথা আছে। আছে রবীন্দ্রনাথের গান যেভাবে রবীন্দ্র সংগীত হলো তার একটা পর্যালোচনা। ‘তিনটি দেশের জাতীয় সংগীত ও রবীন্দ্রনাথ শিরোনামে’ বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত নির্বাচনের প্রেক্ষাপট নিয়ে সবিস্তার ব্যাখ্যা, তৎকালে বাংলা চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথের গানের ব্যবহার এবং প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার কর্তৃক ব্যবহৃত বিভিন্ন গানের কথা, ‘বিদেশি সুর ও প্রভাবে রবীন্দ্রনাথের গান’ শিরোনামে রবীন্দ্রনাথের গানের বিদেশি রূপ নিয়ে আছে কয়েকটি গান। রেখেছেন নিভৃতচারী এক গবেষকের প্রচেষ্টার কথা, যিনি শান্তিনিকেতনে বসে ৩০ বছরের সাধনায় রবীন্দ্রনাথের অনেক গানকে সাঁওতালি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। সেইসব গান থেকে ১১টি গান আছে এই গ্রন্থে। সবমিলিয়ে ১৩৩টি গান ও ২টি কবিতা নিয়ে লেখকের এই প্রয়াস। প্রকাশক হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা যদি ভুল স্বাক্ষ্য না দিয়ে থাকে, তবে আমি বলবো বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে এমন প্রচেষ্টা এই প্রথম। নিঃসন্দেহে এটি একটি তথ্যসমৃদ্ধ ও গবেষণামূলক বই, যা রবীন্দ্রনাথের গানকে যারা পছন্দ করেন তাঁদের জন্যই। আমি বইটির আবেদন এবং লেখকের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।