হামদ ও সালাতের পর দুনিয়ার জীবন অতিসংক্ষিপ্ত। এখানে আমরা যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, একদিন তা শেষ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে পরকালের জীবন অনন্তকাল। এর শুরু আছে, শেষ নেই। এজন্যে পরকালের সুখ-ই সুখ। পরকালের দুঃখ-ই দুঃখ। সেখানে সুখেরও শেষ নেই। দুঃখেরও শেষ নেই। পরকালে যে ক্ষমা পাবে, সেই প্রকৃত সফলকাম। তার চেয়ে বড় ভাগ্যবান আর নেই। পরকালে মুক্তি নির্ভর করে দুটি বিষয়ের উপর। এক. ঈমান। দুই. নেক আমল। ঈমান ছাড়া নেক আমলের কোনো মূল্য নেই। ঈমানের সাথে যে ব্যক্তি নেক আমল করবে, সেই হবে পরকালে সফলকাম এবং ইহকালে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, وَعَدَ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْ هُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًاعَظِيمًا যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُواالصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ هُمْ خَيْرُالْبَرِيَّةِ নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারাই সৃষ্টির সেরা। মুমিনের জীবনে নেক আমলের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, নেক আমলের মাধ্যমে অর্জিত হয় মহান রবের সন্তুষ্টির মতো মহাদৌলত। অর্জিত হয় সৃষ্টিজীবের ভালোবাসা ও মহব্বত। নেক আমলের ফলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে আপতিত বালা-মসিবত থেকে রক্ষা করেন। তাদেরকে তিনি দান করেন হায়াতে তাইয়িবা ও দুনিয়ার জীবনে বরকত। সর্বোপরি, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করে দান করবেন জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম। নেক আমলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে− ফরয ও ওয়াজিব বিধানসমূহ। এ সকল বিধান পালন করা বান্দার জন্য অপরিহার্য। করা, না করার ব্যাপারে বান্দার কোনো ইখতিয়ার নেই। না করলে বান্দাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কিছু নেক আমল এমন, যা করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কোনো ধরপাকড় ও বাধ্যবাধকতা নেই এবং কোনো ধরনের হুমকি-ধমকি ও হুশিয়ারিও নেই। তবুও যখন বান্দা এসব নেক আমল নিয়মিত করে তখন সে খুব দ্রুত আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ ও প্রিয় বান্দা হয়ে যায়। হয়ে যায় আল্লাহ তায়ালার ওলী। এমন কিছু নেক আমলের কথা এ কিতাবে আলোচনা করা হয়েছে। কিতাবটিতে মোট পাঁচটি বিষয় স্থান পেয়েছে। ১. নফল নামাযসমূহ: ফাযায়িল ও মাসায়িল। ২. কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত নির্বাচিত দোয়াসমূহ। ৩. হাদিসে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যার দোয়া ও আমল। ৪. নফল রোযার গুরুত্ব ও ফযিলত। ৫. কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও সূরাসমূহের ফযিলত। কিতাবটি সংকলনের ক্ষেত্রে দলিল প্রমাণের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কুরআন, হাদিস ও ফিকহের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদি থেকে প্রতিটি বিষয়ের দলিল পেশ করা হয়েছে। যার ফলে আশা করা যায়, সর্বমহলে কিতাবটি গ্রহণযোগ্য ও সমাদৃত হবে, ইনশাআল্লাহ। কিতাবটিকে নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য করার ব্যাপারে চেষ্টার কোনো কমতি করা হয়নি। তবুও ভুল থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীর দৃষ্টিতে কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে আমাদের জানাবেন বলে আশা রাখি। গ্রন্থটিকে আল্লাহ তায়ালা কবুল করুন। আমিন।