ফ্ল্যাপ থেকে: কবিতা শিল্পের মহোত্তম শাখা এবং পৃথিবীর প্রাচীন ও প্রধান সাহিত্য রূপ । কবি মাত্রই সৃষ্টিশীল স্বেচ্ছাচারিতা যা তাকে মৌলিক ও স্বতন্ত্র করে তোলে; হয়ে উঠেন সন্ত দার্শনিক। ইঙ্গিত করেন সভ্যতার লক্ষ্য, নির্দেশ করেন পথচলার পাথেয়। স্বপ্ন দেখান সুন্দর সুপ্রভাত । দেখান শ্বাশত ভালোবাসার পথ। কাজ করেন একজন রাখালের ভুমিকায়; একজন সারথীর ভুমিকায় । রাষ্ট্র তথা ভৌগোলিক সীমানার বাহ্যিক সীমাবদ্ধতার দেয়াল তুলে ফেলেন। আহবান করেন বিশ্বভ্রাতৃত্বের । সেই আহবানে তাল মাতাল হয়ে পড়ে পুরো সৃষ্টিশীল পৃথিবী। আর এখানেই কবির স্বকীয়তা। প্রকৃত অর্থে একজন কবি স্রষ্টা, স্বনির্মিতির। কবি সৃষ্টিশীল পঙক্তির মাদকতায় নিজেই টালমাটাল এক মহাসমুদ্র। তিনি একইসঙ্গে প্রেম ও বিরহ, যুদ্ধ ও শান্তি প্রত্যাশী। কারন তিনি জানেন— সমগ্র পৃথিবী তার নিবাস। চারদেয়ালে কবিকে বেঁধে রাখা অসম্ভব। যিনি হোমারের বংশধর: সতত সঞ্চারমান। কবিকে খুঁজে নেওয়ার একমাত্র স্থান তার কবিতা। কবি শাহ্ কামাল তার যাপিত জীবনকে কবিতায় ঋদ্ধ করেছেন সৃষ্টিশীল কাব্যসাধনায়। তার নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্যেচর্চা, সৃজনশীল শব্দের সংসারে নিবেদিত থাকা এ এক অনন্য প্রয়াস। ‘আগুনের পঙক্তিমালা’ কবির তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ । নাম ভুমিকার কবিতা ব্যতীত অন্যান্য কবিতার সাথেও কাব্যগ্রন্থের শিরোনামের গভীরতম যোগসূত্র রয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থের ৪৬টি কবিতা সমাজ বাস্তবতার নানা ঘাত প্রতিঘাতে মানবজীবনের যে গল্প সংকলন তারই প্রতিনিধিত্ব করছে । ‘প্রতিটি শব্দমালা ’কবিতায় কবি বলেছেন – (১) মহাদেব সাহার এক কোটি বছর তোমাকে দেখিনা এ আমারই কথা এ তোমারে লক্ষ্য করে একটি খসড়া প্রেমপত্রমালা (২) তবু হাফিজের কাছ থেকে যে প্রিয়ার কথা শুনেছি সে কেবল তুমিই শেক্সপিয়রের সনেটগুচ্ছগুলো যাকে লক্ষ্য করে লেখা সেও তুমি (৩) এই বুকের বাঁ পাশেই তুমি তোমার সেই ছবি এঁকেছে পিকাসো, ফিদা, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি এঁকেছে জয়নুল, কামরুল, সুলতান এবং আজকের তরুণ আঁকিয়ে সেও আমি (৪) এই ক্যামেরন, আব্বাস কিয়রো, সত্যজিৎ, তারেক মাসুদ সবই আমি সবই তোমাকে লক্ষ্য করে এ কবিতায় যে চিত্রকল্প উপস্থাপন করেছে তা শুধু কবির নিজস্ব অন্তর্নিহিত কথা নয়— এটি সর্বজনীন। কাব্যগ্রন্থটি পাঠক হৃদয়ে স্থান পাবে বলে বিশ্বাস করছি।
শাহ্ কামাল (১৪ মার্চ, ১৯৮৫ - বর্তমান) তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম মোঃ আব্দুল জলিল এবং মাতার নাম রেহেনা বেগম । তিনি পিতা-মাতার প্রথম সন্তান। তিনি গ্রাম, শহর ও মফস্বলের এই তিনের মিশ্রিত পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন । তার শৈশব কেটেছে জন্মস্থান রামচন্দ্রপুরে। তারপর কৈশোরের প্রথম দুই বছর ঢাকায়। অতঃপর আজ অবধি তিনি প্রাচ্যের ডান্ডির খ্যাত নারায়ণগঞ্জের বুড়িগঙ্গা- ধলেশ্বরী- শীতলক্ষার অববাহিকায় ফতুল্লার সোদামাটির নির্যাসের সাথে মিশে আছেন। পড়াশোনা আর কর্মসংস্থানের সুবাদে রাজধানী ঢাকার অলিগলির সাথেও আছে এক নিবিড় সম্পর্ক। এসব জনপথের মাটি ও মানুষের সাথে তার যে গভীর সম্পর্ক সেই সম্পর্কের স্পন্দনই তার লেখনির উৎস। তিনি তার গ্রামের স্কুল থেকেই শুরু করেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সফর। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ভাল ছাত্র হিসাবেই তার বেশ সুখ্যাতি আছে সে শৈশব থেকেই কিন্তু সমাজ বাস্তবতায় পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা সংকটের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে। এইসব জীবন বাঁকের নানা বৈচিত্র্যতা যেমন: উত্থান- পতন, আবেদন- নিবেদন, দুঃখ-শোক, আশা- আকাঙ্খা- উচ্চাশা, বিরহ- প্রনয়, বন্ধন-বন্ধুতা তাকে এক নান্দনিক অভিজ্ঞতার ক্যানভাসে উন্নত করেছে, উঠেছেন এক অনন্য আপোসহীন প্রতিবাদী প্রতীক হয়ে। আর এইসবের স্পষ্ট ছাঁপ তার কাব্যের পঙক্তিমালার পরতে পরতে । "আগুনের পঙক্তিমালা" কবির তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। তার অন্য দুটি কাব্যগ্রন্থ "কড়া রোদের গল্প" (২০২৩) ও "ছাইচাপা আগুন" (২০২২)। উল্লেখ্য, তার কবি প্রতিভা প্রকাশিত হয়েছে ছাত্রাবস্থা থাকাকালেই । তার অনেক কবিতা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন সহ জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে ।