‘চড়–ই’-- ভিন্নস্বাদের এই কবিতাগুচ্ছ মানবের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো নিয়ে খেলা করে। তীক্ষ্ণ বিদ্রুপ এবং গভীরতার এক অনন্য সংযোজন-- কখনো কখনো প্রকৃতি, কখনো শিশুমন, প্রাণিকুল এবং কখনো অন্ধকারের একটি গ্রহে বাস করে-- পবিত্র এবং জাগতিক সংঘর্ষের বিন্দুতে বিদ্যমান চির-উপস্থিত প্যারাডক্সকে নাড়া দেয়। কিছু কবিতা যেমন ‘অন্টারিওর অর্ফিয়াস’ এবং ‘সারা রাতের ক্যাফে’, পাতলা ঘোমটাযুক্ত স্ব-প্রতিকৃতির মতো মনে হয়। ‘সারা রাতের ক্যাফে’ কবিতাটির শুরুর লাইনগুলো বর্ণনাকারীর পর্যবেক্ষণের ক্ষমতাকে প্রতিফলিত করে এবং বিশ্বব্রহ্মান্ডে কবির নিজস্ব অবস্থান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু প্রকাশ করে: ‘একটা ছেলেকে কবিতা লিখতে দেখতে ভালো লাগে / সারা রাত ধরে থাকা ক্যাফের জানালা দিয়ে / তার প্রায় খালি কাপ, তার সিগারেটের প্যাকেট / কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তার কনুইয়ের কাছে / ভেজা টেবিলের ওপর।’ যে কবিতাটির আলোকে বইটির নামকরণ করা হয়, একটি চড়–ইয়ের মৃত্যুর অভিজ্ঞতা নিয়ে খুব সহজ ভঙ্গিমায় কথা বলা হয়: ‘চড়ুইয়ের দেহ মুচড়ে যাওয়া নাচ, সূক্ষ্ম যন্ত্রণা / যখন সে তার আহত কাঁধে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করে: / ঘূর্ণায়মান ভেসে থেকে, সংক্ষিপ্ত কম্পনরত ওড়া এবং পতিত অবতরণ / --অতঃপর অপেক্ষা, হাঁপানো’ অত্যন্ত হৃদয়বিদারক কিন্তু অহরহ ঘটে যাওয়া এই ঘটনার প্রাঞ্জল বিবরণ আমরা পাই এই কবিতাগুলোয়। সাধারণ বিষয়গুলোকেই এক অন্য আলোয় দেখে উপস্থাপন করা হয়েছে বইটিতে। বইটি পড়ার পরে পাঠক অনুধাবন করবেন যে কবিতা হলো অস্তিত্বের সাথে লড়াই করার একটি মাধ্যম এবং অর্থহীন এই বিশ্বকে বোঝার এক অনন্য উপায়।
মম কাজী দূর পশ্চিমে হিমের দেশ কানাডার অভিবাসী মম কাজী। পূর্বপুরুষের নিবাস বরিশালে। দেশে পড়াশুনা করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। দ্বাদশ শ্রেণি পাস করার বছরই পাড়ি জমান বিদেশে এবং সেখানে হিসাববিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরিও করছেন। সাহিত্যের প্রতি প্রেমের টানে প্রতিদিনের বই পড়ার অভ্যাস এবং লেখালেখির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশের চর্চা। তিনি একজন জনগণের মানুষ এবং লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক কাজের দ্বারা জয় করেছেন টরন্টোর মানুষের মন। ইতিপূর্বে তাঁর একটি অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সমাজসংস্কার মম কাজীর মনের নিভৃত লালিত স্বপ্ন এবং সমদর্শিতা তাঁর প্রিয় দর্শন।