যে সব মানুষ ১৯৬০ অথবা ১৯৭০-এর দশকে কানাডাতে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন, যাঁরা তার পরে এসেছেন এবং যাঁরা আসার কথা ভাবছেন, তাঁরা সবাই অসীম আগ্রহ নিয়ে এই বইটি পড়বেন এবং ঋদ্ধ হবেন। ডক্টর ঝর্ণা চ্যাটার্জীর এই বইটির মূল উপাদান তাঁর নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা। বাল্য, কৈশোর, যৌবন ছাড়িয়ে বর্তমান কাল পর্যন্ত যার ব্যাপ্তি। ভারতবর্ষে তাঁর ছাত্রীজীবন, কানাডায় চলে আসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া, শাড়ি-প্রীতির কারণে কানাডার উইনিপেগ শহরের প্রবল শীতের সঙ্গে তাঁর মোকাবিলা আমাদের তাঁর অনমনীয় মানসিকতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যা পাঠকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করবে তা হলো তাঁর মানুষকে আপন করে নেওয়ার এবং জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা। জীবনের পথ অতিক্রম করতে গিয়ে কত মানুষের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটেছে, যাদের কাছে পেয়েছেন-- গভীর সংবেদনশীলতার সঙ্গে তিনি তাঁদের কথা লিখেছেন। সবটাই আলোকময়, কোথাও এতটুকু নিরাশার ছায়া পড়েনি। বর্তমান কালে, জীবনের একাকিত্বকে স্বীকার করে নিয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন। অটোয়ার বাংলা ক্লাবের সঙ্গে তিনি বিশেষভাবে যুক্ত। প্রায় প্রতি বছর কোলকাতায় যান, আর পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সময় কাটান। এছাড়া তাঁর দেশ-বিদেশ ভ্রমণ তো আছেই। এই বইয়ের মাধ্যমে আমরা পরিচিত হলাম শেকড় ছিঁড়ে পৃথিবীর অপর গোলার্ধে অবস্থিত একটি সম্পূর্ণ অচেনা দেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কঠিন সংগ্রামের সাথে। একই সঙ্গে তিনি ঘর-সংসার সামলেছেন, পিএইচডি করার পর সরকারি উচ্চপদে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সামাজিকতা করেছেন এবং সর্বোপরি বাঙালির একান্ত আপন বাঙলা সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। অর্থাৎ সব দিক দিয়ে জীবনকে ভালোবেসেছেন এবং উপভোগ করেছেন। জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সহজ সরল ভাষায় গল্পচ্ছলে বলবার ফাঁকে ফাঁকে তিনি আসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন কানাডা সম্পর্কে নানা চিত্তাকর্ষক ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক তথ্যসম্ভার। তারপর আছে তাঁর প্রায় পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়ানোর গল্প, যা পাঠককে বিশেষভাবে মুগ্ধ করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি শ্রীমতি ঝর্ণা চ্যাটার্জীকে চিনি, জানি। আমাকে তিনি নিজের ছোট বোন বলেন। ওই যে বললাম মানুষকে কাছে টেনে নেওয়ার ক্ষমতা। ‘একটি বাঙালি মেয়ের কানাডার জীবন-কাহিনী’ হলো একজন অসাধারণ মানুষের অসাধারণ জীবনের কাহিনী, যা এই বইয়ের স্বল্প পরিসরে প্রকাশ করা হয়েছে। -- সুপর্ণা মজুমদার
ঝর্ণা চ্যাটার্জী শৈশব থেকে কবিতা লিখতে ভালোবাসতেন ঝর্ণা চ্যাটার্জী (জন্ম ১৯৩৯)। পরে গদ্যসাহিত্য রচনাতেও তাঁর আগ্রহ জন্মায়। পশ্চিমবঙ্গের ছোট্ট শহর আরামবাগে শৈশব ও কৈশোর কাটানোর ফলে প্রকৃতি ছিল তাঁর অতিপ্রিয় নিত্যসহচরী। কোলকাতায় বেথুন কলেজ থেকে এবং পরে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে অনার্স ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে কানাডায় আসার পর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবায় মনস্তত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বিয়ের পরে কিছুদিনের জন্য টরন্টো ও সার্নিয়াতে বসবাস করেছেন ঝর্ণা। ১৯৮৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ইউনিভার্সিটি অব অটোয়া থেকে। যুক্ত ছিলেন কানাডার কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে-- সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণার কাজে। বিশ্বভ্রমণ ও সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ও নিজের তোলা ছবির মাধ্যমে অন্যের সাথে ভাগ করে নেওয়া তাঁর অন্যতম নেশা। বেশ কয়েক বছর ধরে অটোয়ার বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন ‘দেশান্তরী’র ই-ম্যাগাজিন ‘লিপিকার’ সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে-- চোখের দেখা প্রাণের কথা (কবিতা, নব দিগন্ত প্রকাশনী, কোলকাতা), ভালবাসার ছড়াছড়ি (শিশুদের জন্য কবিতা, নব দিগন্ত প্রকাশনী, কোলকাতা), সন্ধ্যারাগে (কবিতা, বাংলা প্রকাশ, ঢাকা), ভালবাসার গল্প (ছোটগল্প ও প্রবন্ধ, বাংলা প্রকাশ, ঢাকা), তুষার-বরফ-জমাট বৃষ্টির কবিতা ও কাহিনি (পালক, ঢাকা), তুলনা তার নাই (ভ্রমণ কাহিনি, সপ্তর্ষি প্রকাশন, কোলকাতা), অন্তরে বাহিরে (কবিতা, পরম্পরা প্রকাশন, কোলকাতা)। ইংরেজি বইয়ের মধ্যে রয়েছে A Grand Voyage Around the World (Travelogue, Palok, Dhaka), Earth from North to South (Travelogue, Palok, Dhaka), A Sprinkling of Europe (Travelogue, Palok, Dhaka), It's A Wonderful World (Travelogue, Palok, Dhaka).