বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বরিশাল বিভাগস্থ বরগুনা জেলার হলতা এবং বিষখালী নদীযুগলের কোলঘেঁষে বামনা মফস্বল শহর। খ্রিষ্টাব্দ ১৯১৩-এর প্রশংসনীয় কোনো এক প্রাতে জাহাজের উপর পরিচালিত হতে থাকে বামনা থানা। ১ নভেম্বর ১৯৭৭ তারিখের প্রথম প্রহর, ঘুটঘুটে কৃষ্ণ আধারী মাঝরাত তখন। শহরের একমাত্র বাইন বংশের যৌথ পরিবারে ভূমিষ্ঠ শ্যামল বর্ণের কালো দুটি আঁখি ও মায়াভরা মুখখানির এক কন্যা। ভদ্র বাইনের ধর্মপত্নী রাণী এর গর্ভে অরিত্রীর জন্ম। এর তিনমাস পর ওই বাইন বাড়িতেই জন্ম হয় অরিত্রীর জেঠতুতো ভাই অর্জুনের। শিশুকাল থেকে একত্রে খেলাধুলার মধ্যদিয়ে তুতো ভাইবোন একদা স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের উপযুক্ত বয়সপ্রাপ্ত হয়। বিয়ে না করেও স্বামী-স্ত্রীর মতো দুজনের চলাফেরা। তয় বাদসাধে হিন্দুধর্ম ও সমাজ। লিভ টুগেদার হেতু তুতো ভাইবোনের উদ্দেশে ঘৃণাসূচক সমাজের রিরি করে উঠা। স্বধর্মের বিধিবিধান মেনে বাবার আদেশে গম্ভীরের সাথে সাতপাকে বাঁধা পড়ে অরিত্রী। পরন্তু বহালতবিয়তে অরিত্রীর পরকীয়া চলতে থাকে তুতো ভাই অর্জুনের সাথে। আর ইহা সাতপাকে বাঁধা পড়া গম্ভীরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে। প্রচন্ড মনঃকষ্ট ও অনুতাপে দগ্ধ গম্ভীর নির্যাতনকারী অরিত্রীর নামে নালিশ করে। দুজনের ডিভোর্স হয়। অতঃপর স্বধর্মের বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে তুতো ভাই অর্জুনের সাথে অরিত্রী কোর্টে গিয়ে গাঁটছড়া বাঁধে। অর্জুন-অরিত্রী জুটির সংসার বেশিদিন টিকে না। অরিত্রীর জেঠতুতো দিদি চপলার সলাপরামর্শ এবং আস্কারা পেয়ে পাঁচবছরের দাম্পত্যজীবন ছেড়ে অর্জুন অন্য নারীকে বিয়ে করে। আচনক অমন অবস্থায় অরিত্রী ভীষণভাবে ভেঙে পড়ে। এতে একাকিত্ব দানা বাঁধে। ফেসবুকে নিত্যনতুন নিজের ছবি আপলোড করায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এই একাকিত্ব ঘোচাতে পুনবিয়ের অভিপ্রায়ে সঙ্গী তালাশ ও ডেটিংয়ে অভ্যস্ত হয়। দিকভ্রান্ত অরিত্রী এখন পঞ্চাশের কোঠায় এক সিঙ্গেল নারী। তয় বিষয়খানা একান্ত তার নিজস্বতা জেনেও জানার আগ্রহ প্রকাশ করি। গল্প বলতে গিয়ে দীর্ঘ তার জীবনে ঘটেযাওয়া ভালোমন্দ অনেক ঘটনার কথাই বলে ফেলে। সহসা অনুমতি চাই, ঘুণেধরা হিন্দুধর্ম ও সমাজের নারীদের একজন হিসেবে তার গল্পটা আমি লিখি। তাৎক্ষণিক সম্মতি, গল্পবলা শুরু করলেও মাঝপথে এসে হঠাৎ থেমে যায। গল্প শুনতে সরজমিন সংশ্লিষ্টদের দ্বারস্থ হয়ে আমার এলেখা শেষ করি। বস্তুত মূখ্য চরিত্র নয়, বরং সব চরিত্রই ছদ্মনাম ও যতদূর সম্ভব বাস্তবধর্মী তথ্যের সন্নিবেশনে আমার এই উপন্যাসখানা রচিত।