একটা খুনের চিন্তা মাথায় নিয়ে আমি শহরের রাস্তায় হাঁটছি। ভাবছি, যে মৃত্যু কামনা করছে তাকে মারলে সেটা খুন হবে নাকি উপকার করা হবে? রাস্তায় কত মানুষজন দেখা যাচ্ছে, কেউ চলছে পায়ে, কেউ চাকায়। আমি মুখগুলো দেখছি, প্রায় প্রত্যেকটা মুখ আমার চেনা। যে লোকটা হনহন করে হেঁটে আসছে, তাকে দেখে মনে হচ্ছে জরুরি কাজে দেরি হয়ে যাচ্ছে তার, আসলে সে এভাবেই হাঁটে। দিনের অর্ধেক সময় কাটায় চায়ের দোকানে, কমদামি সিগারেট খায়। ছুটির দিনে যে মহিলাটা কোচিং থেকে বাচ্চা নিয়ে বাসায় ফিরছে, তাকেও চিনি আমি, সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করে সে, সব সময় একটাই বোরকা পরে। তার স্বামীকে নতুন নতুন শার্ট গায়ে প্রায়ই কমবয়সী একটা মেয়ের সাথে রিকশায় দেখা যায়। মোটর সাইকেলে যে পেটমোটা লোকটা এইমাত্র হর্ন বাজাতে বাজাতে পার হয়ে গেল, তাকে একদিন মিছিলে দেখেছিলাম, সামনের লাইনে থাকার জন্য বাচ্চাদের মতো কনুই দিয়ে ঠেলাঠেলি করছে। ফোনের পর্দায় চোখ রেখে বোকা ডোডো পাখির মতো হাঁটতে থাকা ছেলেটা, সাইকেলে গলগণ্ডের মত কলসি বেঁধে ধীর লয়ে প্যাডেল ঘুরানো দুধওয়ালা, রিকশায় ফেরা বিধ্বস্ত পতিতা, এইসব মুখ দেখছি আর ভাবছি, এই মানুষগুলোকে কি আমি খুন করতে পারবো? যার মনে দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, অনুশোচনা নেই, মায়া নেই তার দ্বারা ভয়ানক সব কাজ করা সম্ভব। যতই ভাবছি, ততই নিজেকে খুব বিপজ্জনক মনে হচ্ছে।