ফ্ল্যাপে লিখা কথা চিম্বুক পাহাড়ের জাতক। ইতিহাস নয়, ভূগোল নয়, ধর্ম-দর্শন নয়, পরিভ্রমণ-আলেখ্য নয়, বরং একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস। অঙ্গ, বঙ্গ, হিমালয় উপত্যকা, তিব্বত, চীন, হিন্দুকোশ পর্বত, গান্ধার, সিন্ধু, ইন্দ্রপ্রস্থ, বিন্ধ্যপর্বত, নর্মদা-তুঙ্গাভদ্রার পর্বত গুহা, প্রয়াগ, কলিঙ্গ, মগধ, নালন্দা। প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাসের দীর্ঘ পরিভ্রমণ। প্রস্তরযুগের ঘোর অন্ধকারের অর্নিশেষ দুঃখের অগ্নিস্রোত জন্ম জন্মান্তর রক্তধারায় বহন করে চলে এক আদি মানব আর এক মানবী। কাল থেকে কালান্তর। আলেকজান্ডারের কাল থেকে হর্ষবর্ধন। আরব, তুরস্ক, আফগান অভিযানের ধূসরকাল। যুগযুগান্তরের শক, হুন, পাঠান, মুঘল, ইংরেজ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ। ধর্মহীন থেকে ধর্ম, ধর্ম থেকে ধর্মান্তর, আত্মপরিচয় শূণ্য মানব থেকে আত্মআবিষ্কারক ব্যক্তি-মানব। চিম্বুকের পাড়াড়ের জাতক। জাতক মহাপুরাণের অভিনতুন রূপান্তর ৈএই উপন্যাস। গৌতম বুদ্ধের জাতকের উপাখ্যানে জন্ম আর পুনর্জন্মের যে জটিল খেলা চলে তারই আরর্তে ঘূর্ণায়মান চিম্বুকের জাতক। অস্ত থেকে অনন্তকালের প্রসারণ। মানব জীবনের জরা, মৃত্যু-দুঃখের এক কূহক জগৎ। অতলান্তিক অনন্তপ্রসারী দুঃখ ভোগের জন্ম-মৃত্যু চক্রে মুক্তি থাকে অদৃশ্যমান। হাজার-লক্ষ বৎসর কেবলই চলে এই খেলা। বারংবার নারীপ্রেম ছিন্ন হয় যেমনি তার তেমনি হারায় জীবনের স্বাধীনতা। বুঝি দুঃখই নিয়তি। বঞ্চনা-অপ্রাপ্তিই অন্ধবিধান। ভাষা বঞ্চিত যে আদি মানব পাথরের হাতিয়ার হাতে তুলে বিচূর্ণ হয় রাজ শক্তির হাতে, তার পরাজয় তো নির্ধারণ ঞয় এই সভ্যতার কাছেই। ভাষা, ধর্ম, গোত্র আর রক্ত ধারার চক্র, রাজশক্তি, ঔপনিবেশিক শক্তি, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, স্বৈরাচারী রাষ্ট্র তার প্রবল প্রতিপক্ষ। রাষ্ট্রহারা, নারীর প্রেমহারা, অস্তিত্ব হারা আদি মানব রক্তাক্ত হয় চিম্বুক উপত্যকায়। পুনর্বার রক্তাক্ত হতে পুনর্জন্ম ঘটে তার চিম্বুক পাহাড়ে। অথচ সে জাতিস্মর। সবই দেখে অনাদি অতীত স্বপ্নের মায়াবী জগৎ থেকে। সেই মায়াবী জগৎ সেই পুনর্জন্ম উপন্যাসটি ধারণ করেছে মানব জীবনের অর্নিশেষ দুঃখভোগ আর সভ্যতার অসম ক্রমবিকাশকে প্রতীকীকরণের সূত্র ধরে। কেননা এ উপন্যাস রাজন্যবর্গ আর অবতারদের ইতিহাস নয়। এ হচ্ছে নদী আর পর্বতের সন্তানদের মহাকালের আলেখ্য। কালের এই মহাযুদ্ধ দুঃখের বিরুদ্ধে যে দুঃখ পার্বত্যগুহাবাসী জাতক বহন করছে হাজার-লক্ষ বৎসর পূর্বে শিরায় শিরায়। হাতে যার পাথরের হাতিয়ার, স্বপ্নে বহন করছে যে গৌতম বুদ্ধের দুঃখ বিজয়ী নির্বাণ, তার জন্ম-পুনর্জন্মেরই মহাকাব্য চিম্বুক পাহাড়ের জাতক।
হরিপদ দত্ত। জন্ম : ২ জানুয়ারি ১৯৪৭ খ্রি. গ্রাম : খানেপুর, উপজেলা : পলাশ, জেলা : নরসিংদী। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: অজগর, জন্মজন্মান্তর, দ্রাবিড় গ্রাম, মোহাজের, চিম্বুক পাহাড়ের জাতক (৪ খণ্ড) প্রভৃতি। গল্প সমগ্র, প্রবন্ধ সমগ্র ও শিশু-কিশোর সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে। পুরস্কার : বাংলা একাডেমি পরিচালিত সাদ’ত আলী আকন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০০১ এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০০৬ (উপন্যাস)।