দীর্ঘ নয় মাস-ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়টাতে দুটি অজপাড়া গাঁয়ে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাপ্রবাহকে কেন্দ্র করে এ উপন্যাসের কাহিনি বিধৃত হয়েছে। এ উপন্যাসের কিছু ঘটনা সত্য, কিছু কাল্পনিক। গল্পের মিসবাহ্ চরিত্রটি কাল্পনিক নয়। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বার্তা প্রেরণকারী ব্যক্তি মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ যিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বার্তাটি হাতে পাবার পর তা চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাকে একবার পাকবাহিনীর লোকেরা হাত, চোখ, মুখ বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যার এতোবড় ভ‚মিকা ছিল তার কোন জাতীয় স্বীকৃতিই ছিল না বা মুক্তিযুদ্ধের কোন সার্টিফিকেটও নেই। উপন্যাসের মিহির চরিত্রটি সাবেক পিজি হাসপাতালের প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের। এরা দুজনের কেউ-ই আজ জীবিত নেই। রতন চরিত্রটি ডাঃ আব্দুল বাতেনের, যিনি বর্তমানে রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা। এরা তিনজনই মুক্তিযুদ্ধে ভীষণভাবে অবদান রেখেছিলেন। এদের কীর্তিগাথা গাঁয়ের লোকের মুখে মুখে আজো ফেরে। এ উপন্যাসের বেশিরভাগ চরিত্র বাস্তবিক হলেও এদের সকলের ভ‚মিকা ও তখনকার পারিপার্শ্বিকতা অনেকটাই অনুমান নির্ভর ও কাল্পনিক। রাজাকার দেলোয়ার আর বিন্দী চরিত্র দুটি কল্পনাপ্রসূত। রাজাকারের এ চরিত্রটি সৃষ্টির মাধ্যমে হিংস্র ও বর্বর এক পাকি দালালের কঠিন শাস্তি ও করুণ পরিণতি দেখানোই লেখকের একটা প্রয়াস ছিল মাত্র। বিন্দী চরিত্রটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সদ্য কৈশোর পেরোনো একটি সহজ, সরল গ্রাম্য মেয়ের মাঝেও কীভাবে মুক্তির বলিষ্ঠ চেতনা জাগ্রত ছিল। দেশের জন্য এমন হাজারো কিশোর-তরুণদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এসেছিল বাঙালির মুক্তি, কাক্সিখত প্রিয় মহান স্বাধীনতা। উপন্যাসের লেখক নিজ গাঁয়ের লোকের মুখে মুখে যা কিছু শুনেছেন, তার সাথে নিজের কল্পনার রঙের মিশেলে উপন্যাসের কাহিনি এঁকে নিয়েছেন আপন চিত্রকল্পের ঠাসবুননে।