বঙ্গীয় সমাজ জীবনের কতিপয় খণ্ড চিত্র নিয়ে এই বই। এই চিত্রণে, রাজা-বাদশাহর ইতিহাস অনুপস্থিত: বাংলার নর-নারীর জীবনচর্চার কয়েকটি দিক নিয়ে আলোকপাত করাই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। উনিশ শতকের বাঙালিসমাজে শাশুড়িতন্ত্রের একাধিপত্যের কাহিনী ও বউ-কাটকি শাশুড়িদের বিদায় নিয়ে লেখা প্রবন্ধ ‘সেকালের শাশুড়িতন্ত্র’। রসগোল্লা বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার। সম্প্রতি উড়িষ্যা রসগোল্লা অবিস্কারের দাবী তুলেছে। যা কোনোভাবেই ইতিহাসসম্মত নয়। এই বিতর্কের রেশ ধরে লেখা হয়েছে রসগোল্লার আবিস্কারের সামাজিক পটভূমিকা এবং প্রথা ভেঙ্গে বাঙালি মিষ্টান্ন শিল্পে ছানার আবির্ভাবের কাহিনী। মাছের ভাতে বাঙালি বলা হলেও বাঙালির চেয়ে ঢের বেশি মাছ খায় ইংরেজ, জাপানী ও কোরিয়ানরা। ‘মৎস্যপুরাণ-মাছ ও বাঙালি’ লেখাটিতে বঙ্গীয় জীবনে মাছ এবং তার প্রভাব নিয়ে এক রসঘন কাহিনী বলা হয়েছে। মাছের রাজা ইলিশ নিয়েও রয়েছে তথ্য ও বিশ্লেষণমূলক দুটি পূর্ণাঙ্গ রচনা। বাঙালির মতো ইলিশ-পাগল জাত দুটি যে নেই তাও প্রমাণিত হয়েছে এই লেখাগুলোতে। বাংলা ভাষা শেখাতে বাংলা পাঠশালার বিশাল অবস্থান আজ বিস্তৃত প্রায়। সেই পাঠশালায় কি ধরনের বই পড়ানো হতো এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিরোধিতা সত্বেও কি করে সেই বই গত শতকের মাঝ পর্ব পর্যন্ত টিকে ছিলো তা নিয়ে সরস আলোচনা করা হয়েছে তথ্য ও বিশ্লেষণের মিশেল দিয়ে। বাংলার নবাবদের আম চর্চা ও আম নিয়ে মাতামাতির নানা রসালো কাহিনী রয়েছে ‘আমচরিত : যে কাহিনীর শেষ নেই’ প্রবন্ধে। সুন্দরবনের বিষাদ মধু প্রবন্ধে মধু সংগ্রহকারী মৌয়ালদের কষ্টকর ও বিপদজনক কাহিনী বিধৃত হয়েছে। সুন্দরবনের প্রতি ফোঁটা মধুতে মিশে রয়েছে মৌয়ালদের ঘাম, রক্ত, বাঘের আক্রমণ আর তাদের বিধবা স্ত্রীদের কান্নার নোনাজল। হালখাতা বাংলা নববর্ষ নিয়ে বিশ্লেষণপূর্ণ কিন্তু সরস আলোচনাও এই পাণ্ডুলিপির একটি মূল্যবান সংযোজন। গড়পড়তা শিক্ষিত বাঙালির অভিধান খুলে দেখার গড়িমসির দরুন নানা ভুলভ্রান্তি আজীবন তার সঙ্গী হয়ে থাকে। অভিধান অনিহার ফলে যে কত কৌতুককর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাও বলা হয়েছে ‘অভিধান আলস্য’ প্রবন্ধে। একসময় বাংলাকে বলা হতো পৃথিবীর তাঁতঘর, আর তাঁতীরা ছিল এই রমরমা বস্ত্রশিল্পের মূল চালিকাশক্তি। বাংলার তাঁতীদের পতনের কাহিনী বলা হয়েছে তাঁতীর বাড়ি ব্যঙ্গের বাসা... প্রবন্ধে। বাঙালির রঙ্গপ্রিয়তার বড় নিদর্শন তার বুদ্ধিদীপ্ত, তীব্র ব্যঙ্গের কশাঘাতে পূর্ণ কার্টুন চিত্র। এ নিয়ে একটি সচিত্র পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রয়েছে। বাঙালির পায়ের তলায় সরষে অর্থাৎ তার ভ্রমণ প্রবণতা নিয়ে লেখা হয়েছে ‘বাঙালির ভ্রমণ-আদি পর্ব’ প্রবন্ধে।
জন্ম ১৯৪৪, নেত্রকোনায়। শৈশব কেটেছে বাবার চাকরিসূত্রে সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের নানা জেলা শহরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৬-তে স্নাতকোত্তর। কিছুদিন অধ্যাপনার পর ১৯৬৮ সালে কূটনৈতিক ক্যাডারে যোগ দেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দূতাবাসের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন কলকাতা, ভারতে মিশন-প্রধান ছিলেন। এরপর মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। প্রকাশিত অন্যান্য বই : শায়েস্তা খানের শেষ ইচ্ছা ও অন্যান্য (২০১২), গুপ্তধনের খোঁজে (২০১৩), হারাধনের দশটি ছেলে ও অন্যান্য (২০১৫) ও দেখা না-দেখায় মেশা (২০১৫)। ইতিহাসের অপ্রচলিত অলিগলিতে তাঁর বরাবরই প্রবল আগ্রহ। কলের গানের পুরোনো বাংলা রেকর্ড সংগ্রহ, গ্রন্থপাঠ ও অবসরে অন্তরঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন।