একই পরিবারের তিন প্রজন্মের তিনজন কবিকে নিয়ে আমার এই প্রয়াস। সময় বয়ে গে তার স্ব-প্রকৃতি নিয়ে, রেখে গেছে তার ছাপ, তার বলিষ্ঠ প্রত্যয়। সময়ের একটি নিজস্ব কথন আছে যা অবশ্যম্ভাবীভাবে ছাপ রাখে কবির মননে ও চেতনে। এই তিনজন কবির কবিতায় তার ছাপ স্পষ্ট। উপমহাদেশের প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি জ্ঞানতাপস, চিন্তাবিদ এবং তাঁর পাণ্ডিত্যের খ্যাতি সর্বজনবিদিত। তবে তিনি যে কবিতা লিখেছেন এ তথ্যটি হয়তো অনেকেরই অজানা। কাব্যপ্রীতি তাঁর মধ্যে নিয়ত বহমান ছিল। হয়তো এই কাব্যপ্রীতি থেকেই তিনি ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াৎ অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর প্রিয় কবি ছিলেন হাফিজ। তিনি দেওয়ানে হাফিজ এবং কবি ইকবালের শিকওয়া এবং জবাবে শিকওয়া'র অনুবাদ করেছেন যা বহুল আলোচিত হয়েছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র কবিতার মূল উপজীব্য বিষয় ধর্মীয় অনুভূতি ও মানুষকে আদর্শ জীবনাচরণের প্রতি আহ্বান। বিশেষ করে 'জীবনের লক্ষ্য ও পরিণতি কবিতায় তাঁর নিজের জীবনের দর্শনই পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। জীবনের লক্ষ্য ও পরিণতি কবিতা ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয়। এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র কবিতায় তৎকালীন বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের আবেগ ও অনুভূতি সর্বতোভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর লেখা কবিতাগুলো এই গ্রন্থে সঙ্কলিত করা হয়েছে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র চতুর্থ পুত্র মুহম্মদ তকীয়ুল্লাহ্। আমাদের সমাজে কোন কোন মানুষ আছেন যাঁরা তাঁদের সততা, নিষ্ঠা ও আদর্শের আলোয় পারিপার্শ্বকে আলোকিত করেও রয়ে যান প্রচারের পাদপ্রদীপের আড়ালে। ফোকাসের বাইরে থাকা এমনি একজন মানুষ – মুহম্মদ তকীরাহ। ভাষা আন্দোলনকে যাঁরা সংগঠিত করেছেন এবং এই আন্দোলনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন মুহম্মদ তকীয়ুল্লাহ্ তাদের অন্যতম। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ এবং এল.এল.বি পড়ার সময় এদেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন অফিসার হিসাবে নিয়োগের জন্য ইন্টার সার্ভিস সিলেকশন বোর্ড (আই.এস.এস.বি) কর্তৃক তিনি বাঙালি হিসাবে প্রথম নির্বাচিত হয়েও ভাষা আন্দোলনের কর্মী হিসাবে জড়িয়ে পড়ায় সেনাবাহিনীতে যোগ দেননি। ১৯৪৯ সালে রাজনৈতিক কর্মতৎপরতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন এবং তাঁর নামে হুলিয়া বের হওয়ায় আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যান। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। আমাদের ভাষা ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রগতিশীল ছাত্র ও যুব সমাজকে সংগঠিত করার জন্য ১৯৫১ সালে যুবলীগ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি তখন কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৬-৫৮ সালে যুবলীগ কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন মুহম্মদ তকীল্লাহ্। ১৯৫২-৫৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী ছিলেন। ১৯৬২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী স্বৈরাচার বিরোধী গণ-আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আবার গ্রেপ্তার হন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তফাজ্জল হোসেন