মানুষের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা হচ্ছে তার হিলিং পিরিওডটা। খুব ক্ষতবিক্ষত একটা আত্মা যখন তার ক্ষত সারিয়ে তোলে, সবাই ক্ষতহীন মানুষটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করে। কিন্তু প্রকৃতঅর্থে মানুষের উচিত অ্যাপ্রিশিয়েট করা তার সেই সময়টাকে, যেই সময়টাতে সে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয় আগামীর জন্য। এই সময়টাতে মানুষ কাউকে খোঁজে, খুব পরিচিত কোনো প্রশস্ত বুক কিংবা কাঁধের আকাঙ্ক্ষা গলার কাছে এসে দলা পেকে যায়। এই সময়টাতে ভীষণরকম ক্ষুধামন্দা নিয়ে মানুষ ভাতের সাথে কান্না মিশিয়ে গিলে ফেলে হাহাকার। তারা জানে, এভাবেই একদিন চলে যাওয়ার ফলক লিখে রাখবে দূরত্বের বয়ান। হিলিং পিরিওড পার করা মানুষগুলোর চোখ আলাদা রকমের গ্লো করে। পৃথিবীতে মায়া ছাড়া সবই ফুরায়। জীবনানন্দকে বুকে নিয়ে বললে বলতে হয়-- ‘নক্ষত্রের মতো প্রেমও তো ধীরে মুছে যায়, সেখানে ক্ষত, অভিমান, অভিযোগ তো নস্যি!’ বুকটা পেতে আগলে রাখা কারো বাঁধন খুলে দেয়া মানুষ, খুলে ফেলতে পারে যন্ত্রণার শেকলও। আমৃত্যু পাশে থাকার কথা দেয়া যে তুমুল প্রেম মুছে গেছে, তার সাথে তুলনা হয়, না-থাকা সময়ের যন্ত্রণাদের। বাদবাকি, যা কিছু মায়া রয়ে যায় দিনান্তের তা সুন্দর, পরিশোধিত, পরিমার্জিত। ক্ষত, অভিমান কিংবা অভিযোগের সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। দিনশেষে নিজের সাথে নিজের এতো যুদ্ধের পরও যতটুকু মায়া শীতের নরম-আরাম রোদের মতো গড়াগড়ি খায় বুকের ভেতর নতুন গজানো কচি ঘাসে, সেই মায়া ভীষণ পবিত্র। এই মায়া যে ছুঁতে পারেনি, সে হতদরিদ্র, সে শূণ্য, ভীষণ শূণ্য! আর যে এই মায়া বয়ে বেড়াতে পারে, তাকে কষ্ট দেয়ার ক্ষমতা বিধাতা কাউকে দেননি।
সামিরা রহমান ৭ ডিসেম্বর, নওগাঁ জেলায় মান্দা চকগোপাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান। নিজ জেলা থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার তাগিদে রাজশাহীতে আসেন। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে পেশায় একজন শিক্ষিকা। ২০২০ অমর একুশে বইমেলায় লেখিকার লেখা প্রথম উপন্যাস শেষ প্রান্তে বইটি পাঠক হৃদয়ে। ব্যাপক সাড়া ফেলে, বইটির প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়ে দ্বিতীয় মুদ্রণ বের হয়। পরবর্তীতে তার লেখা আরো তিনটি তুমুল আলোচিত উপন্যাস হলো- গহীনে শব্দ, বিষন্ন বিকেল ও একরাত্রি। পালাবদল উপন্যাসটি লেখিকার পঞ্চম প্রয়াস। আশা করছি এ উপন্যাসটিও পাঠকের মাঝে তীব্র আড়োলন সৃষ্টি করবে। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন আড়ম্বরহীন ও অনেকটা নিভৃতচারী।