ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের ছোট বড় মিলিয়ে কয়েকটি গল্প সংকলিত হয়েছে এই গল্পগ্রন্থে। “এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে” গল্পের পটভূমি ১৯৯০-২০০০ সাল, সেই সময়ের ভালবাসা ও প্রেমের পরিণতি হয়তো অনেকক্ষেত্রে এমনই হত। গভীর ভালবাসা এবং বিরহ-বিচ্ছেদের কারণে জীবন থেকে তথা স্বদেশ থেকে আজাদের পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে গল্পটিতে। জীবনযুদ্ধে সংগ্রামরত এক শ্রমিক পিতা তার একমাত্র পুত্রের আব্দার পূরণ করতে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে সেটা ফুটে উঠেছে “জুতা” গল্পে। রম্য গল্প “বিচ্ছু”-তে পাওয়া যায় আমাদের চারপাশের অতি পরিচিতজনরাই কিভাবে নিজেদের নিকটজনদের সাথে অতি সংগোপনে প্রতারণা করে। সূক্ষ্ম হিউমার ও স্যাটায়ারের সংমিশ্রণ এই গল্পটি। “আপন পর” গল্পে পালক পুত্র কখনো কখনো নিজ পুত্রের চেয়েও বেশি মানবিক হয়, বেশি আপন হয়। “মমতার মমতা” ও “আফিয়া” গল্পদুটির দুই নায়িকা চিরন্তন বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত ঘরের তরুণী কিন্তু একজন অতি সহনশীল, অন্যজন প্রতিবাদী। “প্রতিদান”, “হস্তরেখা ও একটি বুলেট” এবং “অপেক্ষা” গল্প তিনটি ল্যাটিন আমেরিকায় বসবাসরত বাঙ্গালীদের জীবন ও বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে। ‘’মানিক” ও “যুদ্ধকালীন খন্ডচিত্র” গল্প দুটি মহান মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট গল্প। অতি সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঘরের এক তরুণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কিভাবে এতটা সাহসী হয় এবং সংশপ্তক হয়ে যায়, তরুণের মহৎ আত্মত্যাগের পর তার মা এবং প্রেমিকার হৃদয়ের হাহাকার, আকাঙ্ক্ষিত প্রেমে সাড়া না পেয়ে অতিরূপবতী এক মেয়ের মানসিক রোগি হয়ে যাওয়া, এক বাকপ্রতিবন্ধি মিষ্টি মেয়ের অপ্রকাশিত মিষ্টি প্রেমের কাহিনী নিয়ে সর্বশেষ গল্প “জীবন যেমন”।
আব্দুল্লাহ্ খোশ্নবীশ তুহীন জন্ম হয়েছে শিল্প ও সাহিত্যমনস্ক পরিবারে। পূর্বপুরুষদের নিবাস টাঙ্গাইলে হলেও জন্ম, শৈশব ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আজন্ম নেশা বই পড়া ও ঘুরে বেড়ানো। ২০০৪ সাল থেকে ব্রাজিল প্রবাসী। তার আগে বাংলাদেশে থাকাকালীন ছুটে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রোফেশন ও চাকরির সুবাদে। যে-কোনো মানুষের খুব কাতাকাছি পৌঁছে যেতে সময় লাগে না এই লেখকের, তারপর তার জীবনের গল্পটা ভিতর থেকে বের করে এনে অনুধাবন ও অনুভব করতে ভালোবাসেন। বিভিন্ন মানুষের ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, মর্মযাতনা, সুখ-দুঃখ এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে করতে মানুষকে নানা মাত্রায় বিশ্লেষণের অসাধারণ ক্ষমতা অর্জন করেছেন। অত্যন্ত আড্ডাপ্রিয় এবং স্বভাবজাত রসিক। বর্তমান পেশা প্রবাসী শ্রমজীবী হলেও নিজেকে লেখক ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মনের আনন্দে লিখে যাওয়া প্রচারবিমুখ এই মানুষটি মাঝে মাঝে নিজের মতো করে আবৃত্তি করতে পছন্দ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং দুইটি কন্যা সন্তানের জনক।