ফ্ল্যাপে লিখা কথা আবদুল্লাহ আল মামুন আমাদের দেশের জনপ্রিয় ও অগ্রগণ্য নাট্যকার। মঞ্চের সাথে তাঁর সক্রিয় সম্পর্কের কারণে অনেক মঞ্চসফল নাটক রচনা করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে সম্ভবত তাঁর রচিত নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছে সবৃাধিক। যদিও নাট্যরচনা তিনি শুরু করেচিলেন স্বাধীনতার আগে, তবু নাট্যকার হিসেবে তার ব্যাপক পরিচিতি বাংলাদেশ হবার পরই।
নাট্যকার মামুনের প্রিয় বিষয় মুক্তিযুদ্ধ। তাই ‘সুবচন নির্বাসনে’ দিয়ে যখন স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর মঞ্চ নাটক রচনার শুরু তখন থেকেই মুক্তিযুদ্ধ, তার চেতনা, তার প্রতিক্রিয়া, তার বিরোধিতা ইত্যাদি তাঁর নাটকে ফিরে ফিরে এসেছে। নিজেকে তিনি স্পষ্টভাবে এবং উচ্চকিত কণ্ঠে সম্পর্কিথ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের পখ্ষের শক্তির সাথে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির নানা অপকৌশল তিনি চিহ্নিত করেছেন তাঁর নানা নাটকে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাঁর এক ধরনের দায়বদ্ধতা সহজেই চোখে পড়ে।
বর্তমান সংকলনে আবদুল্লাহ আল মামুনের দশটি নাটক স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ছ’টি নাটক সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে না হলেও, মুক্তিযুদ্ধের ফলে সমাজে যে বিবর্তন ঘটেছে, তা-ই নাটকগুলো উপজীব্য। এই নাটকগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত একজন নাট্যকারকে আমাদের সামনেন উপস্থিত করে। সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনা প্রবাহ নাট্যকরর মামুনকে বেশি প্রভাবিত করে। ফলে নাটকের বিষয় নির্বাচনের জন্যে তাঁকে দূরে দৃষ্টি দিতে হয় না। আমাদের চারপাশে যা ঘটছে তা-ই শিল্পসম্মতভাবে তাঁর নাটকে উঠে আসে। আবদুল্লাহ আল মামুনের বেশির ভাগ নাটকেই কাহিনীর আড়াল থেকে একটি সুস্পষ্ট বক্তব্য উঠে আসে যা তাঁর সমাজভাবনার পরিচয় বহন করে। অসাধারণ সংলাপ, কাহিনীর নিপুন গাঁথুনি ও একজন পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখার কারণে তাঁর নাটক সহজেই জনপ্রিয়তা অজর্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশের নাটকের কিংবদন্তির পুরুষ। আজীবন তিনি নিবেদিত ছিলেন নাটকে এবং বাংলা নাট্যধারায় যুগিয়েছেন বিশেষ সমৃদ্ধি। এমন বহুমুখী নাট্যপ্রতিভা খুব বেশি পাওয়া যায় না। তিনি নাট্যকার হিসেবে অসাধারণ সিদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর নাটকে সমকালীন জীবন ও অন্ত্যজ মানুষের আনন্দ-বেদনা গভীর ব্যঞ্জনা নিয়ে ফুটে উঠেছে। তিনি ‘থিয়েটার’ গােষ্ঠীর প্রাণপুরুষ হিসেবে নির্দেশনা দিয়েছেন অনেক নাটকের। সর্বোপরি মঞ্চ-অভিনেতা হিসেবে বহু চরিত্রে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। নাট্যপ্রশিক্ষণেও তাঁর জুড়ি বিশেষ ছিল না। তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে এক ঝাক নবীন অভিনেতা-অভিনেত্রী। অভিনয় শিক্ষাদানে নিবেদিতপ্রাণ আবদুল্লাহ আল মামুন তার অভিজ্ঞতালব্ধ গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মিলিয়ে অভিনয়-শিক্ষণের প্রাথমিক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন ১৯৯১ সালে। এর পরবর্তী খণ্ডের। কাজ তিনি আর করে যেতে পারেন নি। কিন্তু এই বই এখন থেকে তার হয়ে প্রশিক্ষণের কাজ করে চলবে। অনাগত দিনের নাট্যকর্মীরাও এখান থেকে পাবেন শিক্ষা এবং পথ চলবার প্রেরণা।