পৃথিবী ক্রমশ শব্দহীন হতে থাকে। আলো ফুরাতে থাকে একটু একটু করে। টুশির দুচোখে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম। প্রশান্তির ঘুম। যেন কতদিন এমন শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি টুশি। ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে থাকে বিরতিহীন। সেকেন্ডের পর মিনিট, মিনিটের পর ঘণ্টা। মাঝে মাঝে নতুন নতুন স্টেশন। নতুন নতুন জনপদ প্রায় প্রতিটি স্টেশনেই ক্ষণিকের বিরতি মাঝরাতেও কেউ উঠছে, কেউ নামছে। জীবনের এ এক অনিবার্য ছন্দ। কেউ ওঠে বলেই হয়তো কেউ নামে। অথবা কেউ নামে বলেই হয়তো কেউ ওঠে। প্রকৃতি জানে কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয় মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায় টুশির। চোখ মেলে তখন দেখে নতুন স্টেশন, নতুন জনপদ। একটু বাদেই আবার দুচোখে ঘুম নেমে আসে। পাশের সিটে যাত্রী নেই আজ। বড্ড স্বস্তিতে ঘুমায় টুশি। তৃর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেস যখন ফেনী জংশনে এসে থামল, দূরের মসজিদ থেকে তখন ভেসে আসছে ফজরের আযান। রাতের অন্ধকার ভেদ করে ক্রমেই এগিয়ে। আসছে আলোর রেখা। একটুখানি হিমেল হাওয়া টুশির শরীর ছুঁয়ে ফের মিলিয়ে গেল দূরে কোথাও। টুশি ট্রেন থেকে নামল সন্তর্পণে। ভ্যানিটি ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটতে লাগল বিক্ষিপ্ত পায়ে। স্টেশন থেকে বেরুবার পথটা আবিষ্কার করতে এদিক-ওদিক খুঁজল কিছুক্ষণ। নিজের বাড়ি ছেড়ে এই প্রথম টুশি এত দূরের কোনো শহরে এলো।
শূন্য দশকের একজন উল্লেখযোগ্য লেখক ইমন চৌধুরী। এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। জন্ম ১৮ জুন। নোয়াখালীর মাইজদী সরকারি কলোনিতে। পিতা মফিজুর রহমান চৌধুরী’র সরকারি চাকরির সুবাদে শৈশবের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে এখানে। মা দেলোয়ারা বেগম গৃহিনী। পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার পৈথারা গ্রামে। ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ফেনী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রথম আলো পত্রিকার এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় সাপ্তাহিক রম্য ও বিদ্রুপ ম্যাগাজিন ‘আলপিন’-এর মাধ্যমে প্রথম হাজির হয়েছিলেন পাঠকের সামনে। এরপর ইত্তেফাক, সমকাল, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব সংবাদপত্রেই নিয়মিত লিখেছেন। লিখছেন এখনও। সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে রম্য ও বিদ্রুপ লিখে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও ইমন চৌধুরী জীবনঘনিষ্ঠ গল্প-উপন্যাস লিখতেই বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। প্রথম প্রকাশিত বই ‘লাল পাড় সাদা শাড়ি’। প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘মেঘের কাছে রোদের কাছে’। উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে ‘পাশের মানুষ’, ‘পায়ে তার কাচের নূপুর’, ‘এই বসন্তে এসো’, ‘রোদ পড়েছে ডানায়’, ‘ডেকে যায় ফাল্গুনের রোদ’, ‘অন্তহীন’ অন্যতম। লেখালেখির সূত্রেই পেশাগত জীবনে বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতা। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় জৈষ্ঠ সহ-সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। জীবন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। রোগ, শোক, মহামারী, অনিশ্চয়তার এই মানব জীবনে মহাকালের কাছে কিছু গল্প জমা রেখে যেতে চান কেবল।