নাজমুন নাহার কুষ্টিয়া শহরের সংস্কৃৃতিমনস্ক বিশেষ পরিচিত মুখ। একজন ভালো আইনজীবী হিসেবে কুষ্টিয়া জজকোর্টে তার সুনাম রয়েছে। ভালো আবৃত্তিকার হিসেবে রয়েছে স্বতন্ত্র অবস্থান। আমি তার আবৃত্তি শুনেছি। বিখ্যাত কবিদের কবিতা আবৃত্তি করার ফাঁকে ফাঁকে নিজেই মাঝে মাঝে কবিতা লিখতে শুরু করেন। কবিতা তৈরি হলে বের হয় প্রথম কবিতাবই ‘ধুলো মাখা রোদ্দুর’ এবং দ্বিতীয় ‘নীল সাগরে ব্যথাার ঢেউ’। আমি তার সেই কবিতাবই পড়েছি। সম্প্রতি তার তৃতীয় কবিতাবই ‘মায়ার তির’ বের হচ্ছে জেনে আনন্দিত হয়েছি। এই কবিতাবইয়ের কিছু কিছু কবিতাও আমি পড়েছি। কবি নাজমুন নাহার বরাবরই তার কবিতায় প্রেম ও বিরহকে প্রাধান্য দেন। প্রেমকে দেখেন পবিত্র হিসেবে। প্রতারণায় কষ্ট পান। সুখ খুঁজে পান মানুষের সুস্থ চিন্তা ও সফল প্রণয়ে। সৎ ও সাহসী চিন্তাও তার কবিতার আর এক প্রধান অবলম্বন। কবির ভাষা দুর্বোধ্য নয়, সহজ; আমাদের চেনার জগতের ভাষা। কাছের মানুষের ভাষা। আধুনিক কবিতায় বিশেষত গদ্য কবিতায় অনেকেই ছন্দ, অলঙ্কার, তাল, লয় আর বিবিধ নিয়মকানুন মেনে লিখছেন না, তবুও কবিতা পড়তে অসুবিধে হয় না। মানুষ পড়ে। কবিতাকে ভালোবাসে। নাজমুন তার কবিতায় আন্তরিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। পড়ুন তাঁর একটি কবিতা---- প্রত্যয় অতীতের ডায়েরি খামচে ধরে নিঘুর্ম রাতে, জোনাকির আলো প্রায় প্রিয়মান দূরের পথে, বিষণ্ণ রাত! চোখের কাজল ঢাকা পড়ে গেছে নিশির তিমিরে, ভেজা মেঘে অমাবস্যার গ্রহণ যাতনার চাদরে আড়ি পেতে বসে প্রশ্বাস টেনে—হিঁচড়ে বের করে আনে— ইতিহাস! বানভাসির কপলে ঝরে কোলাহলময় দিনের ফেলে আসা দীর্ঘশ্বাস। সময়ের কাঁটা থামে না কোনো বিচারে রবির কিরণ উঠবেই প্রভাতে বেঁচে থাকার প্রত্যয় আশাজাগানিয়া বিশ্বাসে।
চট্টগ্রামের হালিশহরে নৌ বাহিনী কলোনিতে ১৯৭৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. নূরুল ইসলাম ও মাতা-মোছা. শামছুন্নাহার ইসলাম।পিতার চাকুরির সুবাদে চট্টগ্রাম ও খুলনায় ছোটোবেলা কাটলেও বেড়ে উঠেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে। শখের বশে লেখালেখি, আবৃত্তি ও নাচ করে থাকেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে আইন বিষয়ে সম্মানসহ ২০০২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসাবে কুষ্টিয়া জজ কোর্টে দীর্ঘ ২২ (বাইশ) বছর যাবত আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। তাছাড়া কুষ্টিয়ার সহকারী সরকারি কৌসুলী (এজিপি) হিসাবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২ এ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'ধূলো মাখা রোদ্দুর'। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩ এ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'নীল সাগরে ব্যথার ঢেউ'।