অসুখের দিন। ব্যর্থ এক সার্জারি, ভোগান্তি ও আবারো সার্জারির বয়ান। অভিজ্ঞতার বাইরে এ বয়ানে আলাদা করে অনুসন্ধানের তৎপরতা নেই। হতে পারে একপক্ষীয় দেখাদেখি। তা সত্ত্বেও অভিজ্ঞতা বা যন্ত্রণার নানান অভিমুখ থাকে। পরিবেশ-পরিস্থিতি থাকে। কোনো না কোনো পরিপ্রেক্ষিত থাকে। যেখানে ব্যক্তি, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র ও পরিবার আলাদা না। তাই ব্যক্তি কোনো নিরপেক্ষ ধারণা নয়।
ব্যক্তিগত দিনলিপির মতো করে গল্পটি বলার চেষ্টা করেছি। হয়তো শেষ পর্যন্ত শুরুর টোন রাখতে পারি নাই। আমি যেমন যন্ত্রণার নিদান চাইছিলাম, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ গল্প বলাবলিরও দাড়ি টানতে চাইছিলাম। যদিও আমি এখনো ভুগছি; কিন্তু লেখার সুনির্দিষ্ট গন্তব্য ঠিক করেছি। সেই পর্যন্ত গল্পটা বলেছি। ব্যক্তিগত কিছু বিষয় কাঁটছাট করেছি, অহেতুক ভোগান্তি বাড়ানোর মানে হয় না, আরো কিছুকাল তো বেঁচে থাকবো। শরীর ও মনের যে যৌথতা আমরা জেনেছি- তাতে মনের ব্যথার পাল্লাটা বোধহয় ভারি। তার ভার অসহনীয় ও ক্ষমাহীন। ফলত যেটুকু বোঝা বহনে সক্ষম মনে হয়েছে, সে গল্পটা বলেছি।
একইসঙ্গে আমার চিকিৎসক বন্ধু ও সর্বশেষ সার্জারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকের প্রকৃত নাম উল্লেখ করেছি। এর বাইরে সব চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ছদ্মনামের আশ্রয় নিয়েছি। কারণ যন্ত্রণার পাশাপাশি প্রমাণ-অপ্রমাণের দায় আলাদা করে নিতে চাই নাই। যেহেতু আমি এ পীড়নকে সামষ্টিক জায়গা থেকে দেখি, এর দায় রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক সংগঠনও এড়াতে পারে না। যারা জবাবদিহি, স্বচ্ছতার সব পথ আমাদের সামনে রুদ্ধ করে দিয়েছে। এবং সমাজের যে ক্ষয়, সেটা সবচেয়ে বড় আঘাত আমাদের জন্য। সঙ্গে আমি এমন এক সকরুণ দুনিয়ায় নিজেকে দেখেছি, যেখানে আমরা কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারি না। এমন কাঠামোর ভেতর আমরা জড়িয়েছি, নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। যাদের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ হতে পারে, তারাও কোনো না কোনো কাঠামোগত বিশৃঙ্খলতা ও বিচ্যুতির শিকার। আবার তারা কতটা দায়িত্বের প্রতি সদয়, সেটাও প্রশ্ন।
একইসঙ্গে পরিবার ও বন্ধুদের গল্প বলেছি। যেহেতু ব্যক্তিগত বয়ান; ফলত তাদের নাম ও ভালোবাসার ভার চলেই আসবে। কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছি উৎসর্গ অংশে। তবুও কৃতজ্ঞতা আবারো, আমাকে বেঁচে থাকার জন্য অবিরাম শক্তি জুগিয়ে যাচ্ছেন। সত্যি বলতে কী; কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও শুকরিয়ার জানানো আমার কাছে এখন বেঁচে থাকার নিরন্তর জ্বালানি মনে হয়। আমার বউ সাজেদা আক্তার, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পাশে ছিল। তার জন্য ভালোবাসা, এই প্রথম আলাদা করে বলছি। ‘অসুখের দিন’ পড়ে তড়িৎ মতামত দিয়েছেন সাইদ খান সাগর। কৃতজ্ঞতা। উপল বড়ুয়া প্রতিটি শব্দ ধরে ধরে ঠিক করে দিতে চেয়েছে। অশেষ কৃতজ্ঞতা। প্রচ্ছদ করে দিয়েছেন খেয়া মেজবা। যার সহমর্মিতা অফুরান বরষার মতো। আমার ব্যক্তিগত ব্লগের জন্য নামলিপি করেছিল নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। ভালোবাসা। এবং বাছবিচার ও ইমরুল হাসান ভাইসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞতা। আমার গল্পটুকু রাষ্ট্র করার জন্য তারা সাহায্য করেছেন।