‘অনাবাদি মানবজমিন : চিন্তাচাষির মর্মপীড়া’ এই বিষয়টি নিয়ে ভাবলেই সহজেই সমাজের চিন্তাশীল মানুষের বেহাল দশার এক করুণ আর্তি ফুটে ওঠে। এর ভেতরে চিন্তাশীল মানুষের মর্মপীড়া যে কোন অতল গহীনে তলিয়ে যাচ্ছে তা অনুধাবন করা যায়। সমাজের অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদেরই কদর বেড়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে চিন্তাশীল মানুষের চিন্তার জায়গায় আঘাত করা হচ্ছে, রুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এখানে বাঙালির সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সংগ্রাম, বাংলা ভাষা, কবিতার অর্থহীনতা ও নান্দনিক মূল্য, উপন্যাসে দেশাত্মবোধ ও বিপ্লবীচেতনা, সাহিত্যে সাম্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও সমতানীতি, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও মানবতাবোধ প্রভৃতি বিস্তৃত আকারে বিশ্লেষণ করেছেন। কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন-- ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ/ যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা/ যাদের হৃদয়ে কোন প্রেম নেই, প্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই/ পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।’ আজ আমরা এই সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শিল্প-সাহিত্য নিয়ে কাজ করছি। এ কারণেই লেখক চিন্তাচাষির মর্মপীড়ার কথা বলেছেন। একজন লেখককে কতটা বিড়ম্বনার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে তারই এক উজ্জ্বল অবয়ব পাওয়া যাবে এ প্রবন্ধগ্রন্থে। প্রতিটি প্রবন্ধই স্বতন্ত্র আঙ্গিকে অত্যন্ত সারগর্ভ আলোকপাত করা হয়েছে। লেখক আলী রেজা বিষয়বস্তুর গভীরে প্রবেশ করে তার নির্যাসটুকু তুলে এনেছেন। পাঠককে প্রতিটি প্রবন্ধই মুগ্ধ করবে একথা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। ‘অনাবাদি মানবজমিন : চিন্তাচাষির মর্মপীড়া’ প্রবন্ধগ্রন্থে মোট সাতচল্লিশটি প্রবন্ধ ও একটি সাক্ষাৎকার স্থান পেয়েছে। প্রতিটি প্রবন্ধে তাঁর পা-িত্যের স্বাক্ষর পরিলক্ষিত হয়। লেখক আলী রেজা প্রতিটি প্রবন্ধে অনেক গভীর থেকে তুলে এনেছেন; যা পাঠককে মুগ্ধ করবে। আমি তাঁর এ দীর্ঘ পরিশ্রমের সাফল্য কামনা করে গ্রন্থটির ব্যাপক প্রচার ও পাঠকপ্রিয়তা প্রত্যাশা করছি। পাঠক নিশ্চয় তাঁর এ প্রবন্ধগ্রন্থ পাঠ করে-- সাহিত্য যে মানুষের চিন্তার গভীরে প্রশান্তির বারতা পৌঁছে দেয়, তারই এক উজ্জ্বলতায় উদ্ভাসিত হয়েছে এ গ্রন্থের প্রায় প্রতিটি প্রবন্ধ। কথাশিল্পী ও গবেষক আলী রেজা একজন অনুসন্ধিৎসু পরিশ্রমী লেখক। তিনি তাঁর এই প্রবন্ধগ্রন্থেও পূর্বের প্রবন্ধগ্রন্থের মতো প্রতিভার উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়িয়েছেন এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। পাঠক নিশ্চয় জানবার অনেক বিষয় এখান থেকে নিতে পারবেন। আনোয়ার কামাল কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য আলোচক সম্পাদক-‘এবং মানুষ’ (সাহিত্য বিষয়ক ছোটকাগজ) ঢাকা।
আলী রেজা। একাডেমিক নাম মো. আব্দুর রশিদ। টাঙ্গাইল জেলাধীন ভূঞাপুর উপজেলার বরকতপুর গ্রামে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি জন্ম। পিতা মো. বন্দে আলী ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাতা রওশন আরা গৃহিণী। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ আলী রেজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন এমফিল ডিগ্রি। বর্তমানে ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি (সেশন ২০২১-২০২২) গবেষক। পেশা: অধ্যাপনা। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: স্বপ্নরাঙা চোখ (প্রথম প্রকাশ ২০০৭), দ্বিতীয় সংস্করণ ২০২০। উপন্যাস: এতোদিন কোথায় ছিলে (২০০৮); যৈবতী কন্যার মন (২০০৮); প্রেমসুখ প্রেমদুঃখ (২০০৮)। গবেষণাগ্রন্থ: শরৎসাহিত্যে মানবতাবাদ (২০১৮)। প্রবন্ধগ্রন্থ: সাহিত্যে ব্যক্তি ও সমাজ (২০১৯); সাহিত্য ও মুক্তির সংগ্রাম (২০২১)। সামাজিক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা সভাপতি: স্বরবৃত্ত আবৃত্তি সংসদ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। সদস্য সচিব: যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম, ভূঞাপুর উপজেলা শাখা। সাংগঠনিক সম্পাদক: বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, টাঙ্গাইল জেলা শাখা। সাংগঠনিক সম্পাদক: ভূঞাপুর কেন্দ্রীয় সাহিত্য সংসদ, ভূঞাপুর। সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক: বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস), টাঙ্গাইল জেলা শাখা। আজীবন সদস্য: প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ পাঠাগার, ভূঞাপুর। সদস্য: সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ভূঞাপুর। সদস্য: পুষ্পকলি প্রতিবন্ধি বিদ্যালয়, ভূঞাপুর। সদস্য: দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, ভূঞাপুর উপজেলা শাখা। পুরস্কার ও সম্মাননা: লেখাপ্রকাশ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭; বাংলাদেশ কবি-লেখক ফোরাম সম্মাননা ২০১৭; নবদিগন্ত সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭; টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কার ২০২১; e mail: alirezaphilo @gmail.com