“মাহবুবের হঠাৎ মনে হলো কামরার সমস্ত শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে। আবদুল মজিদ খানের ঠোঁট নড়ছে, কিন্তু মাহবুব তাঁর কথা শুনতে পারছে না। দেয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দ বা এয়ারকুলারের বিজবিজ শব্দও নেই। মাহবুবের কানে একটা নিঃশব্দের স্বন। আর কিছু নেই। মাহবুবের দমবন্ধ লাগছে। খোলা চোখে সব দৃশ্য আগের মতো হলেও ওর মনে হচ্ছে যে ও এখন আর এই কামরায় নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে মাহবুব শোরগোলের শব্দ পেলো। সেই শোরগোলে কিছু আর্তনাদ। আগুন আগুন চিত্কার। গুলির শব্দ। হাহাকারের শব্দ। মাহবুবের মনে হচ্ছে এসব শব্দের তীব্রতা বাড়ছে, এবং আর কিছুক্ষণের মধ্যে এসব শব্দ বন্ধ না হলে ওর কর্ণকুহর ফেটে ও মারা যাবে। খুব বেশীক্ষণ এই অবস্থা সহ্য করার মতো শক্তি ও শরীরে অনুভব করছে না। মাহবুব মনে মনে বললো, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তি মিনাজ জোয়ালেমিন। অদৃশ্য আর্তনাদের শব্দ ক্ষীণ হচ্ছে। মাহবুবের সামনে বসা আবদুল মজিদ খানের ঠোঁট তখনও নড়ছে। কিন্তু তার কথা মাহবুব শুনতে পারছে না। ওর কানে এখন অদৃশ্য রমণী কণ্ঠে কেউ কথা বলছে। খুব মিহি স্বরে কেউ বললো, মাহবুব স্যার, আপনি আমার কথা শুনতে পারছেন ?” অনেক ঘটনার কোনো যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানীক ব্যখ্যা থাকে না। সেরকম অনেক ঘটনা ঘটে, বা ঘটতে পারে, বা অন্তত আমরা প্রত্যাশা করি যে তেমন কিছু ঘটতে পারে, এবং সেরকম কিছু ঘটলে মন্দ হয় না। আমাদের চারপাশে হওয়া সেরকম অনেক ঘটনা আছে বলেই প্রকৃতি বলে কিছু আছে, আর আছে প্রাকৃতিক এবং অতিপ্রাকৃত ভাবনা। সেরকম কিছু ভাবনা থেকে লেখা মোট তেরোটি গল্প নিয়ে কেতন শেখ-এর অতিপ্রাকৃত গল্পগুচ্ছ।
সাহিত্য, কাব্য আর সঙ্গীতকে নিয়ে স্বপ্নময় আপন ভুবনে কেতন শেখ-এর সময় কাটে। নিয়মিত লিখছেন জাগৃতি প্রকাশনী ও বর্ষা দুপুরের জন্য। পরিজামীরা, অধরা অনুরাগ, অভিসরণ, রাধিকা, কাজল, নীল গাড়ি ও সাদা স্বপ্ন ও এক-দুই-আড়াই তার লেখা আলোচিত উপন্যাস। এছাড়াও লিখেছেন অন্তঃস্রোত (গল্পগ্রন্হ), নিরাকার (গল্পগ্রন্হ), চতুষ্পথ (কাব্যগ্রন্হ), চতুষ্টয় (কাব্যগ্রন্হ) ও চতুষ্কোণ (কাব্যগ্রন্হ)। সম্পাদনা করেছেন বারো ভৌতিক (গল্প সংকলন), শুভেচ্ছা, স্বাগতম! (শিশুতোষ গল্প), দীপান্জলী (কাব্য সংকলন), দীপান্জলি ২ (কাব্য সংকলন) ও ঈশানের ভাবনা (শিশুতোষ গল্প)। জন্ম ঢাকায়। পেশায় অর্থনীতিবিদ। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন থেকে অর্থনীতিতে পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টমিন্স্টারে অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। লেখালেখির মতো সঙ্গীতও তাঁর অন্যতম প্রিয় শখ। তাই মাঝে মাঝে অবসরে তিনি ব্যক্তিগত রেকর্ডিং স্টুডিও এপসিলনে নীল বাতি জ্বালিয়ে সুর সৃষ্টি করেন। ব্যক্তিজীবনে আড্ডাপ্রিয়। বাকি সময় নষ্ট করেন ফেসবুকে আর সিনেমা দেখে।