পলাশ মজুমদারের গল্পে বৈপরীত্য ও দ্বান্দ্বিকতা দুই-ই স্পষ্ট দৃশ্যমান। গল্প পড়ার সময় পাঠক স্বাভাবিকতই ধন্দে পড়ে যান। বৈষম্য ও অনাচার, মানবিক অবক্ষয়, মানুষের স্ববিরোধিতা, ভণ্ডামি ও কপটতার মতো নিকৃষ্ট মনোবৃত্তি, আধুনিক ও প্রাচীনপন্থার বিরোধ, যৌনতা, গতানুগতিকতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন, সংবেদনশীলতা এবং নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা পলাশের গল্পে অনায়াসে চলে আসে। পাঠক কখনো অস্বস্তিতে পড়ে যান গল্পের শুরু এবং শেষ নিয়ে। পলাশ সমাজমনস্ক, রাজনীতির ধার ধারেন না। তবু তার লেখায় সূক্ষ্মভাবে চলে আসে রাজনীতি। পর্যবেক্ষণশীল পাঠকের কাছে তা ধরা পড়ে অনায়াসে। তবে যুক্তিবাদিতা তার গল্পের অন্যতম অনুষঙ্গ। নর-নারীর চিরন্তন প্রেমও পলাশ এড়িয়ে যান না। একই সঙ্গে তার লেখায় প্রকাশ পায় প্রচলিত সমাজব্যবস্থার প্রতি রাগ-ক্ষোভ ও বিদ্রূপ। ধর্মকে তিনি আঘাত করেন না, আঘাত করেন ধর্মীয় মুখোশের আড়ালে ভণ্ডামিকে। ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিদ্যমান ভেদাভেদ ও হিংসা-বিদ্বেষের চিত্র আঁকেন রাখঢাক না রেখে, কারও পক্ষাবলম্বন না করে। অপ্রিয় সত্য বলায় দ্বিধাহীন পলাশ দার্শনিক নন, তবে তার লেখায় দার্শনিকতা স্পষ্ট। আর পলাশের গদ্য ঝরঝরে ও প্রাণবন্ত।