ঝর্না রহমান কথাশিল্পী। তিনি জীবন ঘষে রচনা করেন কথাশিল্পের জগৎ। বাকপ্রতিমার এমন এক ব্যাকরণ তিনি রপ্ত করেছেন, যেখানে জীবন তার আপন স্বভাবে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। ঝর্না রহমানের সেই অসামান্য শিল্পপ্রতিমার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত 'শান্তির বাবা মারা গেছে'। এই গল্পগ্রন্থে ১২টি গল্প স্থান পেয়েছে। প্রতিটি গল্প ঝর্না রহমানের অনন্য জীবনতৃষ্ণা নিয়ে রচিত, আর সেই জীবনতৃষ্ণার মূলে আছে ব্যক্তি মানুষের যন্ত্রণার ইতিহাস। গল্প তৈরি করা কঠিন কাজ। তাই অক্ষম লেখকগণ গল্প তৈরি করেন না- বিবরণ তুলে ধরেন। কিন্তু ঝর্না রহমান গল্প তৈরি করেন, আর সেই গল্পের মধ্যে আমাদের নিত্যদিনের জীবন এতটা বাস্তবতায় এবং অফুরন্ত সৃষ্টিশীলতায় উন্মোচিত হয় যে, তাঁর গল্প পাঠের পর সেই জীবন কিছুতেই আর মাথা থেকে সরানো যায় না। এই গল্পগ্রন্থের প্রতিটি গল্পের মধ্যে একবিংশ শতকে এসে মানুষ কতভাবে যে অশান্তির মধ্যে বসবাস করছেন, তার তীব্র রক্তক্ষরণ অনুভব করা যায়। ঝর্না রহমানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব পলিফনি বা চরিত্রগুলোর নিজস্ব কণ্ঠস্বর তৈরি করা। তার কলমের এক আঁচড়ে সৃষ্টি হয়ে যায় এক-একটি অনন্য চরিত্র। এ বড় দারুণ ব্যাপার। সৃষ্টিশীলতার রস কানায় কানায় পূর্ণ না হলে এমনভাবে চরিত্র তৈরি করা যায় না। জয়তু ঝর্না রহমান।
চল্লিশ বছর ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। ১৯৮০ সনে বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত একুশে সাহিত্য প্রতিযোগিতায় ছোটগল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ। গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, নাটক, কবিতা, ভ্রমণ-শিশুসাহিত্য, সবক্ষেত্রেই তাঁর বিচরণ। গল্পকার হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬০টি। পেশাগত জীবনে তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী। বাংলা ভাষার কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২১ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৭ লাভ করেন। জন্ম ২৮ জুন, ১৯৫৯, গ্রামে বাড়ি : কেওয়ার, মুন্সিগঞ্জ।