আত্মকথন সুখ নামক এক ঘর বেঁধেছি বায়ান্ন তাসের প্রাচীর- ক্যান্সার নামক বিভীষিকা ঘিরে রেখেছে তার চারদিক। আমি যেন ঐ দূর আকাশে ভেসে থাকা রঙধনু, যখন ভেসে বেড়াই তখন সবাই দ্যাখে, আর যখন হারিয়ে যাই তখন আর কেউ খুঁজে না। যে মানুষটা পিপাসায় কাতর, তার সামনে অজস্র খাবার রাখলেও সে নর্দমায় যাবে। তার প্রমাণ তোমরা ইতোমধ্যে দিয়েছ- যারা ছেড়ে গেছে, তাদের কাছে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ থেকেছি, জীবনে অহেতুক ভিড় না বাড়ানোর জন্য... যারা থেকে গেছে, তাদের কাছে নতজানু আমি। আমাকে পুরোপুরি একলা না করার জন্য। আমায় সহ্য করার জন্য। আমায় ভালোবাসার জন্য। যাদের ছেড়ে এসেছি, তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি ধৈর্য ধরে শক্ত করে হাত ধরে রাখতে পারিনি বা তোমায়/তোমাদের ক্ষমা করতে পারিনি বলে। যাদের সাথে আছি, তাদের প্রতি ভালোবাসা... আমার জীবনটাকে আরো সুন্দর ও অর্থপূর্ণ করার জন্য। যারা জীবনে আসবে না, তাদের জন্য অপার আগ্রহ। হয়ত আমি কোনো অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সঙ্গলাভ থেকে বঞ্চিত হলাম। যারা আসবে, তাদের জন্য অপেক্ষা অফুরান। এসো, কিছুক্ষণ বসো, মন চাইলে থেকে যাবে, শুধু সুখস্মৃতির জন্য নয়, দুঃখটুকুর জন্যও তোমায় মনে রাখবো। যারা বিচ্ছেদের পরেও ভালোবেসে আমায় তাদের জীবনে ফিরিয়ে নিয়েছো, তাদের জন্য ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। প্রমাণ করেছো, অহং এর থেকেও আমি তোমাদের কাছে দামি। বিচ্ছেদের পর যাদের আমি ফিরিয়ে নিয়েছি, তোমরাও জেনো- অহং এর থেকে বেশি আমি তোমাদের সাথে আমার সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছি। ভালোবাসি বলেই... যারা ভালোবেসেও কাছে নেই, থাকতে পারোনি, তাদের জন্য সমবেদনা। নিজের সেই দুর্ভাগ্যের জন্য তীব্র এক আফসোস। যারা ভালো না বেসে কাছের জায়গাটা দখল করে আছো ভ্রমের সুযোগে, তাদের জন্য কিচ্ছু না, নিজের জন্য একরাশ সহানুভূতি, হায়রে মন, মানুষ চিনবি আর কখন! একদম শেষে বলবো তাদের কথা, যারা বন্ধু হিসেবে অভিনয় করে যাচ্ছো... কিন্তু জানো না যে আমি তোমাদের মুখ ও মুখোশ দুটোই ভালোভাবে চিনি। এবার আর কারো কাছে না, নিজের আত্মার কাছে পরিষ্কার হও। তোমাদের আমি শত্রু ভাবি না, তবে যেহেতু জানি আপনও তোমরা নও... তাহলে বৃথা এই অভিনয় কেন! আর একজনের কথা বলবো... যাকে ছাড়া আমার জীবন অর্থহীন না হলেও কেমন একটা ফাঁকা আর ফাঁপা। যতটা ভাঙচুরে আজকের আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি, সেই আমায় ভেঙেচুরে গড়েছে। আমার আত্মা, আমার সুখ, আমার প্রাণ, আমার কলিজার টুকরো। তোমাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতে গিয়ে কেমন জানি নুন ছাড়া খাবার মনে হয়। তোমাকে ছাড়া জীবনপথ কল্পনায় হোঁচট খেয়ে পড়ি। সামনেটা অন্ধকার লাগে। তোমাকে কষ্টে দেখলে কেমন স্বার্থপরতা ভর করে আমায়, মনে হয় নিজের মানুষটার জন্য সবসুখ ছিনিয়ে এনে দিই। তাতে যার যা হবে হোক। সূর্য নিজের আলোকে দীপ্তমান, আর আমি- তোমার হাসির আলোকে। শুধু ভালো থেকো এই প্রার্থনা নয়, তোমাকে আজীবন ভালো রাখার দায়িত্ব থেকে ঈশ্বর আমায় যেন বঞ্চিত না করেন। আমার সব সব সব কষ্ট হৃদয়ের একদিকের পাল্লায় আর তোমার হাসিমুখ আরেক পাল্লায় বসালে সেটাই ভারী পেয়েছি। ঈশ্বর আমার আয়ু তোমায় দিক। আমি তোমাকেই বলছি (আফরাজ আদেল নিঝুম) আমার একমাত্র সন্তান তুমি। যখন বড় হবে, তখন হয়ত আমি জীবনের শেষপ্রান্তে। জীবন শেষে তোমায় বলি, তুমি যাই দিয়েছো সেটা ভালোবাসা হোক বা ঘৃণা, সুখ বা দুঃখ সবটাই মাথা পেতে নিয়েছি। নেবোও। শুধু দেখো কোনোদিন যেন আমার হার মেনে নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা না হয়। একটু শক্ত করে হাতটা ধরে রেখো, যেন ডুবলেও তলিয়ে না যাই।
আদেল পারভেজ বলেন সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন মানুষ। আমি কোনোদিন নাম, খ্যাতি, বয়স, জন্মসময় বিবিধের ভীড়ে হারাতে চাইনি। লেখার আনন্দে লেখি। সৃষ্টিসুখের সন্ধ্যানে লেখি। খুব ছোট থেকেই লেখকের বই পড়ার নেশা ছিলো। লেখকের লেখালেখি শুরু হয় কবিতা দিয়ে। তারপর আর থেমে থাকতে হয়নি। নিয়ম করে প্রতিনিয়ত লিখছেন। আমৃত্যু সাধ্য থাকা পর্যন্ত লিখে যাবেন। লেখক বরাবরই বাস্তবতায় বিশ্বাসী। তাই তাঁর দুচোখের সামনে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনাগুলোকেই লেখার মাধ্যমে তুলে ধরছেন। লেখক এক এক করে লিখেছেন — ‘অম্পূর্ণ সত্তা, ‘ট্রাফিক জ্যাম, ‘আশারীন' এর মতো পাঠকপ্রিয় উপন্যাস। 'আশারীন' উপন্যাসটি বর্তমানে পাঠক মহলে ব্যাপক সারা ফেলেছে। কবি ও ঔপন্যাসিক আদেল পারভেজ-এর জন্য আমাদের অনেক ভালোবাসা ও শুভ কামনা রইলো। তাঁর জন্ম ১৯৮৯ সালের ০৯ই নভেম্বর। নারায়ণগঞ্জ জেলার, রূপগঞ্জ থানার গোলাকান্দাইল বিজয়নগর গ্রামে।