কবিতা সমস্ত শব্দ-সংবেদনার শীর্ষস্পর্শী শিল্পকলা—এ কথা প্রায় সর্বজনবিদিত। এমন সংহত, অল্প কথার টানটান ভাস্কর্যময় শব্দপ্রতিমা, অথচ ইন্দ্রিয়সম্প্রসারণক্ষম; সম্ভবত সবচেয়ে শিল্পিত আর নিমগ্নতার চুম্বনচিহ্ন আঁকা । আর কবিরা যখন উপন্যাসের মতো বড় পরিসরে বাক্যজাল বিস্তৃত করেন, তখনো কি সেখানে খেলা করে কথা-বিন্যাসের নতুন কোনো আবেগময় ব্যঞ্জনা? এই কৌতূহল পাঠকমাত্রই প্রায় সবার। বেগম আকতার কামাল কবির উপন্যাস গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ থেকে শুরু করে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শামসুর রাহমান; যাঁরা বাংলা কবিতায় দীপিত করেছেন সময় ও ব্যক্তির সজাগ সংবেদিত বিচিত্র গতি, তাঁদের এমন কথাসাহিত্য- কাঠামো বিশ্লেষণ করেছেন বারোটি প্রবন্ধে । বইটির প্রসঙ্গ-কথায় প্রাবন্ধিক জানাচ্ছেন, 'কবিসুলভ সংবেদনশীলতা, কবিতার ব্যঞ্জনাশক্তি, আত্মগত ভাববাদ, বিশেষ করে আত্মজৈবনিকতা যেসব কবির উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে' সে ধরনের উপন্যাসই এখানে আলোচিত হয়েছে। ফলে বিশ্লেষণের বিশেষ একটি দৃষ্টিকোণ এখানে পাওয়া যায়। তা ছাড়া বেগম আকতার কামাল প্রবন্ধের শব্দচয়ন, বাক্যগঠন এবং ব্যাখ্যার গভীরতর প্রজ্ঞার পরিচয়ে স্বতন্ত্র একটি অবস্থান তৈরিতে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। বিশেষত সাহিত্য- সমালোচনায় দর্শন, মনোবিজ্ঞান ও শিল্পকলার নানান বিদ্যায়তনিক জ্ঞান সম্পৃক্ত করেন তিনি। ফলে তাঁর রচনা সব সময় চিন্তার নতুন নতুন স্তর উন্মোচনে সহায়ক হয়ে ওঠে। কবির উপন্যাস গ্রন্থটিও তাঁর শিল্পচিন্তা ও কথাসাহিত্য সমালোচনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইল ।
গবেষক ও প্রবন্ধকার বেগম আকতার কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পিতা মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, মা মজিদা বেগম। বেগম আকতার কামাল ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘বিষ্ণু দে-র কবিমানস ও কাব্য’ শীর্ষক গবেষণার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।